ফরিদুল মোস্তফা খান :
কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে নিহতদের লাশ নিকটস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এখনো তাদের প্রায় ৪০০ জন লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে দাবী করছেন ক্যাম্পে অবস্থানরত ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশংকা জনক। তারা বর্তমানে স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভস্মীভূত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের আনুমানিক ৭০ হাজার মানুষ বুধবারেও খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সেখানে হাজার খানেক বাংগালী পরিবারের লোকজনও রয়েছেন।
আগুনে এদের কয়কশ ঘর বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
টেকনাফ -কক্সবাজার মহা সড়ক ও আশপাশের খোলা আকাশের নিচে নির্বাক দৃষ্টিতে পায়চারীর পাশাপাশি হায় হুতাশ করছেন তারা।
ঘর নেই, বাড়ি নেই, নেই মাথা গুজার ঠাঁই এসব ভস্মীভূত হাজারো পরিবারের।
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সর্বস্ব হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ তে দাঁড়ালেও রোহিঙ্গারা বলছেন এই সংখ্যা আরও বেশি। তারা ইতোমধ্যে আগুনে পুড়া ২০ জনের লাশ দাফন করছেন।
এই অবস্থায় বালুখালীর আগুনে পুড়া পরিবার গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব।
প্রকট আকার ধারন করছে বিশুদ্ধ পানি সংকট। বিরাজ করছে শোকের মাতম ।
সব মিলিয়ে এক প্রকার মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবারে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচী ও রেড ক্রিসেন্ট রোহিংগাদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যাম্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্থরা কোথাও কোথাও সাহার্য্যকারীদের সহায়তায় তাবু খাটিয়ে ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এদের শুকনো খাবার ও বস্ত্র বিতরন চলছ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখাগদুগ্ধপোষ্য শিশু নারীও বৃদ্ধরা এখনো রয়েছেন সবচেয়ে দুরবস্থায় ।
জানাগেছে, , বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি বেশ বড় পরিসরের।
সোমবার দুপুর তিনটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে ক্যাম্পের ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বালুখালী ক্যাম্পের বেশ কিছু এনজিও অফিস এবং এপিবিএনের একটি ব্যারাকও ভস্মীভূত হয়েছে।
স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালুখালী বাজারসংলগ্ন মার্কেট এলাকা। এখানে কয়েক শ দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পরিচালিত দোকানগুলোর একেকটিতে কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্যসামগ্রী ছিল।
আগুনের খবর পেয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান।অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে স্থানীয় লোকজন ও ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আগুনের ব্যাপ্তি ক্রমাগত বাড়তে থাক
খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আসে। কক্সবাজার জেলা শহর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের সাতটি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামে। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে পুরো আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। স্থানীয়দের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার ও ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে রোহিঙ্গারাই। তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমেই আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন সবার। স্থানীয়রা জানান, ক্যাম্প ঘিরে রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের লড়াই। অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি হারানোদের দাবি, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়; একটি পরিকল্পিত ঘটনা।
মঙ্গলবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. অনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন এটি নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন মতে, আগামী ৩ দিনের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে বের করতে পারবে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) এক টুইটার বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শাহরিয়ার আলম জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্ঘটনায় কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য সোমবার বিকেলে ঘটনার পর এতে আগুন দাতা সন্দেহে আটক করা হয় ৮ রোহিঙ্গাকে।