• বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবমানুষের উপকার করেন যাঁরা আমৃত্যু নীরোগ এবং শারীরিক মানসিক প্রশান্তিতে থাকেন তারানাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের অভিযানে দেশীয় তৈরি বন্দুকসহ সন্ত্রাসী আটকসাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল বিএফআরআই পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মনোনীতসাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা : বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন বাড়ছেআজ শিল্পপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী”কক্সবাজারে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের মাঝে লাখ টাকার চেক বিতরণমুসলিম সমাজের আগাছা মোনাফেক মারা গেলে যারা জানাযা পড়ে এবং জানাযা পড়ায় তারা সকলেই মোনাফেকউখিয়ার গয়ালমারার এনজিওকর্মী আলমগীর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলাবিবাদ বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ড মহাপাপ

সাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা : বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন বাড়ছে

ডা:মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
আপডেট : শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


সাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা।সাংবাদিকতা একটি সম্মানজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি, নির্যাতন ও হামলার শিকার হন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা নিয়মিতই ঘটে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর সঠিক বিচার হয় না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নষ্ট করে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে।

> সাংবাদিকতার ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা

সাংবাদিকরা সমাজের নানা সমস্যা, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। ফলে তারা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী, রাজনৈতিক সংগঠন, ব্যবসায়িক স্বার্থগোষ্ঠী এবং অপরাধীদের টার্গেটে পরিণত হন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও আক্রমণ হয়ে থাকে, যেমন—

* শারীরিক হামলা: মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিং করতে গিয়ে সাংবাদিকরা মারধর, অপহরণ, এমনকি হত্যার শিকার হন।

* মানসিক চাপ ও হুমকি: ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ফোন, নজরদারি এবং হয়রানির মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়।

* আইনি হয়রানি: মিথ্যা মামলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন দমনমূলক আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

> বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিস্থিতি

বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছর অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা শাস্তি পায় না।

> সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা:

দেশের রাজনৈতিক বড়বড় অপরাধী মামলা প্রত্যাহার হলেও প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের মামলা প্রত্যাহারের কোন নজির নেই। কক্সবাজারের নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

সাগর রুনী হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া সহ অপরাধী উল্টো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করার গুরুতর অভিযোগ দীর্ঘদিনের।গত ০৬ মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ কক্সবাজারের নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানএর সাথে যোগাযোগ করে জানাগেছে, মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বহিস্কৃত. খুনী ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার নির্যাতিত সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান এখনো পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রয়েছেন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায়।

মামলার খরচ চালাতে চালাতে তিনি এখন নিঃস্ব। রাষ্ট্র তথা সাংবাদিক কল্যান ট্রাষ্টের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়াতো দুরের কথা তার মামলা নিষ্পত্তি, জানমালের নিরাপত্তা, আটকে রাখা পাসপোর্ট উদ্ধারে এই পর্যন্ত এগিয়ে আসননি কোন মানবতারর ফেরিওয়ালা।

৫ বছর আগে জামিনে কারামুক্তির পর এবং এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, ডিসি, এসপি সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আবেদন নিবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা ঝুলে আছে। প্রত্যাহার হয়নি মামলা।

শুধু আবেদনের রিসিভ কপি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া এই মুহূর্তে নির্যাতিত ফরিদুল মোস্তফার আর কিছুই নেই বললেই চলে।

তিনি বলছেন, মামলার বুঝা সইতে পারছেননা আর। কষ্টেের মাত্রা সীমাহীন হয়ে পড়ছে।

আর্থিক দৈন্যদশার কারণে ফরিদুল মোস্তফা ও তার ফরিবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত মানুষ হত্যা, উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি মাদকের গডফাদর আবদু রহমান বদি, ওসি প্রদীপ এবং তার লালিত মাদক ঘুষ সিন্ডিকেটের মাদক নির্মুলের নামে নিজেদের মাদক ব্যবসার বিরুদ্বে “

টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ শিরোনামে ২০১৯ সালে কয়েকটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি তৎকালীন কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েন।

ফলে সেই সময়ে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করে জীবনের নিরাপত্তা এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে আবেদন করেন ফরিদুল।

কিন্তু দুর্ভাগ্য জুলুম নির্যাতন হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়াতো দুরের কথা ফরিদুল মোস্তফা কে বীনা ওয়ারেন্টে উল্টো ঢাকা থেকে ওসি প্রদীপের টেকনাফ থানা পুলিশ তুলে এনে ২০১৯ সালে কয়েক দিন পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজীর ৬ সাজানো মামলা দিয়ে চালান দেন আদালতে।

আবেদন করেন রিমান্ড।

এই মামলায় তিনি টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগ করে তিনি জামিনে মুক্ত হন। ওই সময় আদালতে মামলা ডিসার্জের আবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারনে চার্জ গঠিত হয়।

পরবর্তীতে অবশ্যই এই ঘটনায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ইসমাইল বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার উপর ঘটে যাওয়া ওসি প্রদীপের জুলুমের কথা উল্লেখ করে সহমর্মিতা প্রকাশ, নিজের সীমাবদ্ধতা এবং তার মিথ্যা মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন।

এই অবস্থায় দায়েরকৃত ৬ মিথ্যা মামলা গত ৬ বছর হয়ে গেলেও এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে প্রদীপ গংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত তার ফৌজদারি মামলাটি রেকর্ড হয়নি আজও।

আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গত ৫ বছর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দবারবার সময়ের দরখাস্ত দিয়ে সময় ক্ষেপন করায় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার আইনজীবিরা পুলিশের পরিবর্তে মামলাটি বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আমলে নেওয়ার আবেদন করলেও তা কার্যকর হয়নি।

একই সাথে ফরিদুলের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, থানার রেকর্ড পত্র পর্যালোচনা সিডিএমএস সংশোধন ও জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত মহামান্য হাইকোর্টে রীট আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়নি গত ৬ বছরে।

কেন তার জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া হবেনা মর্মে স্বরাষ্ট্র সচিব কক্সবাজারের ডিসি এসপি সহ বিবাদীদের রুলেই আটকে আছে রিট পিটিশন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই কে এ ঘটনার ৪ সপ্তাহের ভিতরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও পিবিআই রহস্যজনক কারেনে গত ৬ বছর ধরে হাইকোর্টে

উক্ত প্রতিবেদনটি জমা না দিয়ে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে।

শুধু তাই নয়,নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার নামে পূর্বের ইস্যুকৃত ডিজিটাল পাসপোর্ট টি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নবায়নের আবেদন করলেও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের অজুহাতে পাসপোর্টটি স্থগিত করে দেন পাসপোর্ট মহা পরিচালকের পক্ষে এক কর্মকর্তা। অথচ ডিজিটাল পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনের প্রয়োজন নেই মর্মে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে টানা ৫ বছর পাসপোর্ট নবায়ন করে না দেওয়া দুর্বলের উপর সবলের জুলম বলে মনে করছেন ফরিদুল মোস্তফার স্বজনরা। এই অবস্থায় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাও তার পরিবার মামলা প্রত্যাহার, পাসপোর্ট ফিরিয়ে পাওয়া, থানার রেকর্ডপত্র সিডি এমএস সংশোধন, পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাংবাদিক কল্যান ট্রাষ্ট, পুলিশ সদর দপ্তর, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, উচ্চ আদালত, সকল গোয়েন্দা সংস্থা, পাসপোর্ট সদর দপ্তর, মহা পরিচালক পাসপোর্ট এন্ড ইমিগ্রিশন,

দেশী বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

তিনি ফরিদুল মোস্তফা একজন পেশাদার কারা নির্যাতিত মজলুম সাংবাদিক।

দুই যুগের অধিককাল ধরে তিনি বাংলাদেশ বেতার সহ জাতীয় স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যামে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।

ফরিদুল মোস্তফা কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কক্সবাজারবাণী পত্রিকার সম্পাদকও প্রকাশক।

পেশাগত রোষানলের শিকার ও লেখালেখির অপরাধে নিঃস্ব ফরিদুল নিজের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এখনো।

কোন কুল কিনারা পাচ্ছেননা তিনি।

এতে করে মিথ্যা মামলায় আদালতের মুল্যবান সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে একজন পেশাদার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ফরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সাংবাদিক ফরিদের অভিযোগ, প্রদীপের ৬ মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার চেয়ে গত ৫ বছর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ বনেক ও আবেদন করেছেন।

মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফ সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিক নেতারা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বহুল আলোচিত এসব সাজানো মামলায় মাসে মাসে ধার্য তারিখে কক্সবাজার আদালতে হাজিরা দিতে দিতে তিনি এখন ক্লান্ত বলে ও জানান প্রতিবেদককে।

এছাড়া ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আদালতে তৎকালীন সময়ে দায়েরকৃত তার মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিও জানান ভুক্তভোগী।আর বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুধুমাত্র সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার কারণে।

অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশের কারণে অনেক সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং অনেক দেশেই সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বারবার একই কাজ করছে।

> সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারহীনতার কারণ

সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার না হওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—

১. রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থ জড়িত থাকা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা ক্ষমতাশীলদের দুর্নীতি বা অনিয়ম উন্মোচন করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতিকরা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই নির্যাতনের পেছনে থাকে, যার ফলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

২. দুর্বল আইন ও ন্যায়বিচারের অভাব

অনেক দেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন নেই, আর যেখানে আইন আছে, সেগুলোর প্রয়োগ দুর্বল। অনেক সময় তদন্তের গতি খুব ধীর হয় বা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাবিত করা হয়, যাতে অপরাধীরা শাস্তি না পায়।

৩. প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতি

অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ও প্রশাসন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঠিক তদন্ত করে না। অপরাধীরা রাজনৈতিক বা আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

৪. জনগণের নীরবতা ও মিডিয়া হাউজের দুর্বল প্রতিরোধ

অনেক সময় সাংবাদিকরা হামলার শিকার হলেও জনগণের কাছ থেকে তেমন প্রতিরোধ আসে না। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেক ক্ষেত্রে তাদের কর্মীদের রক্ষার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয় না।

> সাংবাদিকদের সুরক্ষায় করণীয়

সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—

১. কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে কঠোর আইন তৈরি করতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যারা সাংবাদিকদের নির্যাতন করে, তাদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যবস্থা গঠন

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের জন্য বিশেষ সংস্থা বা কমিশন গঠন করা দরকার।

৩. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা

অনেক দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের দমন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৪. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি

সাংবাদিকদের সুরক্ষা কৌশল শেখানো, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

৫. আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা ও চাপ

জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতো সংস্থাগুলোকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নজরদারি করতে হবে এবং সরকারগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, সাংবাদিকতা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সাংবাদিকদের নির্যাতন ও হত্যার বিচার না হওয়ায় সত্য প্রকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বললেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কাটেনি। রাজনৈতিক পট পরির্বতনের পর গত কয়েকমাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে বিচারহীনতার দীর্ঘ সংস্কৃতির ইতি টানার আহ্বান সাংবাদিকদের।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে সাংবাদিকরা হামলাকারীদের “সহজ টার্গেট” হিসেবে বিবেচিত। তবে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছরের ৮ আগস্ট বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকারের তরফ থেকে একাধিকার বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এমনকি বিগত সরকারের সময়ে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা নির্যাতন হয়েছিল, সেগুলোর বিচারের কথাও বলা হয়েছিল।

তাই সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া হাউজ এবং জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে, যা সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন