কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার।
সেখানে অপরাধীদের রাখা হয় কৃত অপরাধের সাজা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে।
সেই কারাগারেই যদি চলে নানা ধরনের অনিয়ম, তাহলে তা উদ্বেগের বিষয় বৈকি! জানা যায়, কক্সবাজার কারাগারে এখনো চলছে অনুমোদনহীন রমরমা ক্যান্টিন বাণিজ্য।
জেলে বন্দি আসামিদের জন্য প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থের আয়েশি খাবার বেচাকেনায় খোদ জেল সুপার এবং জেলার সিন্ডিকেট কারা কর্মকর্তারাই জড়িত।
বহুদিন ধরে চলছে এ ধরনের ব্যবসা।
২০০৯ সালে কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারাবন্দিদের জন্য ‘হালকা ও বেকারিজাতীয় খাবার’ পরিবেশনের অনুমতি নেয়। সেই অনুমতির সূত্র ধরে কিছু কারা কর্মকর্তা বছরের পর বছর আসামিদের কাছে অতিরিক্ত দামে মাছ-মাংসসহ উন্নতমানের খাবার বিক্রি করে আসছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অনুসন্ধান টিমের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কারা কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে হালকা খাবারের অনুমতি নেওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছিল, ক্যান্টিনের আয় থেকে অর্ধেক ব্যয় হবে কারাবন্দিদের কল্যাণে। বাকিটা কারারক্ষীদের কল্যাণে।
কিন্তু দুদকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ক্যান্টিনকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি হচ্ছে। দুদকের একটি টিম সম্প্রতি একটি কারাগারের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। সেখানকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে দেশের অন্যান্য কারাগারের অবস্থা প্রায় একই উল্লেখ করে কমিশনে এ বিষয়ে সুপারিশ দাখিল করে।
কক্সবাজার কারাগারে বর্তমানে বিভিন্ন কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি রাখা হয়েছে। আসামিদের একটা অংশ পরিবারের পাঠানো টাকায় কারা ক্যান্টিন থেকে দামি খাবার খাওয়ার সুযোগ পান। অপরদিকে সাধারণ ও গরিব বন্দিদের কেউ কেউ সরকারি খাবারও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। কারাগারে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত খাবারের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উচ্চমূল্যে ক্যান্টিনের খাবার কিনে খান। কোনো কোনো কারাবন্দির অভিযোগ, অধিক মুনাফার আশায় সংশ্লিষ্টরা কারা ক্যান্টিনের খাবার বেশি বিক্রি করার চেষ্টা করেন।
এক্ষেত্রে কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ কারসাজি করে সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত বিনামূল্যের খাবার যাতে নিুমানের হয়, সেই চেষ্টা করে থাকেন। ক্যান্টিনকে ঘিরে কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি হয় কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ক্যান্টিনে বেশি দামে যেসব খাবার বন্দিদের মাঝে বিক্রয় করা হয়, তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
কারাগারগুলো প্রকৃত অর্থেই সংশোধনাগারে পরিণত হবে, মানুষ এটাই দেখতে চায়। একসময় কারাগারে বসে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। কারাগারে বসে আমাদের দেশের অনেক লেখক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
কিন্তু সম্প্রতি কারাগারে বসে কেউ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন বা বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন-এমন দৃষ্টান্ত বিরলই বলা যায়।
এতে এটাই স্পষ্ট- কারাগারগুলোয় বেশকিছু সমস্যা বিরাজমান।
দেশের কারাগারগুলো যাতে প্রকৃত অর্থেই সংশোধনাগার হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে কারাগারগুলোয় বিদ্যমান পাঠাগারের সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করে সেসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্রমে অন্যান্য সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের তৎপরতা চলমান থাকলে অনেক ভালো উদ্যোগও বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কাজেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করত হবে।