মোহাম্মদ শফিক :
কক্সবাজার এলএ শাখার শীর্ষ দালাল মুহিব উলাহ ও সাবেক সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকাল ৪ টায় চট্রগ্রাম জিইসি মোড়স্থ এমইএস কলেজ গেইট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা এবং দুর্নীতি মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া এর আগে কক্সবাজার ভুমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সদর ভূমি অফিসে দীর্ঘ দিন বহাল তবিয়ে থাকা কাননগো বসন্ত কুমারসহ ১৯ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন সুত্রের দাবী এসব দুর্নীতি থেকে রেহায় পেতে তাদের অনেকেই দৌড়ঝাড় শুরু করে দিয়েছে।
আটক দালাল মুহিব উলাহ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ফরিদ আহমেদের ছেলে এবং কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার। বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় কর্মরত।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখায় থাকাকালীন সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভূমি অধিগ্রহণ কাজে মুহিব উলাহসহ শতাধিক দালাল ও সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতশত কোটি টাকা আয় করেছে বলে অভিযোগ উঠে।
এছাড়াও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত দালালদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেও মুহিব উলাহ ও সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের নাম উঠে আসে। তাদের এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা র্কাযালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
দুদক সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম কাজ ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দালালদের সিন্ডিকেটটি তৈরি হয়েছে। এসব দালাল জমির মালিকদের নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের শুরুতেই দুদক ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করে।
তার তথ্যের ভিত্তিতে পরে ২২ জুলাই মো. সেলিম উলাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের তিন দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূল নথি উদ্ধার করা হয়। পরে আটককৃতদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে প্রায় দেড়’শ দালালের নাম উঠে আসে।
উলেখ্য, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকা থেকে ৯৩ লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক ও ঘুষ গ্রহণের বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়। এর পরই জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও আর্থিক হয়রানি প্রকাশ্যে আসে। এর পর পরই ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ৩০ কর্মকর্তাকে এক আদেশে শাস্তিমূলক বদলি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তার মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত ১৯ জন সার্ভেয়ার, সাতজন কানুনগো ও চারজন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
একই অভিযোগে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারী) দুপুর ১২ টার দিকে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় থেকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে।
মুজিববর্ষের উপহার ঃ কক্সবাজারে ৮৬৫ গৃহহীন এর মধ্যে আজ ৩০৩ জন এর উপকারভোগীর মাঝে নতুন বাড়ি হস্তান্তর
মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আজ দেশব্যাপী প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণের কার্যক্রম গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে মুজিববর্ষে কক্সবাজার জেলায় ৮৬৫ জন গৃহহীন পাচ্ছেন নতুন বাড়ি। তবে এদের মধ্যে থেকে আজ ৩০৩ জন উপকারভোগীর মাঝে নতুন বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। কক্সবাজার প্রান্তে সদর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত নতুন ঘরের চাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো মামুনুর রশীদ।
এতে সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ, পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ,জেলা আওয়ামীলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান,সাবেক সংসদ সদস্য এ থিন রাথাইন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী,সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইটি বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলায় ১৮০টি বরাদ্দের বিপরীতে ৮০টি, পেকুয়া উপজেলায় ৪৫টি বরাদ্দের বিপরীতে ১৪টি,রামু উপজেলায় ১৭৫টি বরাদ্দের বিপরীতে ৬০টি, মহেশখালী উপজেলায় ২০টি বরাদ্দের বিপরীতে ২০টি, উখিয়া উপজেলায় ১০০টি বরাদ্দের বিপরীতে ৩৫টি, টেকনাফ উপজেলায় ২২৯টি বরাদ্দের বিপরীতে ৬০টি এবং কুতুবদিয়া উপজেলায় ২০টি বরাদ্দের বিপরীতে ১৪টি ঘরের চাবি উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।