ফরিদুল মোস্তফা খান :
মানুষ সামাজিক জীব।
মানুষ কখনো একা বাস করতে পারেনা।
তাই দল মত ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে মিলেমিশে একে অপরের সাথে পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্মান দেশ মাটি মানুষ ও সৃষ্টির কল্যানের পাশাপাশি
সৃষ্টিকর্তা সুন্দরতম আকৃতি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করছেন
এবং প্রত্যেককে বিবেক এবং মনুষ্যত্ব দিয়েছেন।
একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঈমানের কঠিন অগ্নি পরীক্ষা এবং প্রতিপালকের দাসত্ব করার জন্য আল্লাহ প্রত্যেক পুরুষের জন্য নারী এবং নারীর জন্য পুরুষ সৃষ্টি করছেন।
বিবেক মনুষ্যত্বহীন মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট এবং অভিশপ্ত প্রানী।
তাদের জন্য রয়েছে শারীরিক মানসিক অশান্তি অসুস্থতা ক্লান্তি হতাশা দুঃচিন্তা এবং অপমানজনক শাস্তি।
আর যারা বিবেক মনুষ্যত্ববান সহজ সরল নরম মনের পরোপকারী নম্র ভদ্র বিনয়ী মার্জিত আচরণের কৃতজ্ঞ মানুষ তাদের জন্য রয়েছে শারীরিক মানসিক পরিপূর্ণ প্রশান্তি এবং সম্মানজনক পুরস্কার।
দল মত ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষের উপকার তাহাজ্জতের নামাজের চেয়ে বেশি।
উপকার করতে না পারলে করার চেষ্টার সওয়াব আরও অনেক বেশি।
যাঁরা চেষ্টা করে তারা সফল হয়।
যারা সফল হয় তারা আমৃত্যু শারীরিক মানসিক প্রশান্তিতে নিমজ্জিত থাকেন।
এর জাগতিক নগদ পুরস্কার হচ্ছে সুস্থ দেহ, সুস্থ মন সুস্থ শরীর প্রফুল্ল প্রশান্ত আত্মা।
মানবিকতা ও ঈমানের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে।
পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার দেওয়া এতিম আত্মীয়কে বা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। এর পরই সে হবে ঈমানদারের অন্তর্ভুক্ত…।
(সুরা : বালাদ, আয়াত : ১২-১৭)
পরোপকারের পার্থিব প্রতিদানস্বরূপ সৌভাগ্যময় মৃত্যু হয় এবং মন্দ মৃত্যু থেকে সুরক্ষা মেলে। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সৎ কাজ করার ফলে মন্দ মৃত্যু থেকে সুরক্ষা মেলে; গোপনে কৃত দান রবের ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আয়ু বৃদ্ধি পায়।
(সহিহুত তারগিব, হাদিস : ৮৯০)
মহান আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে সুযোগ-সুবিধা এবং অভাব পূরণের ক্ষমতার মতো নিয়ামত দান করেন। অতঃপর যখন সে ওই নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে স্বীয় দায়িত্ব পালন না করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার থেকে সেসব নিয়ামত উঠিয়ে নেন।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য নিবেদিত এমন অনেক বান্দা আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপকার করার জন্য বিশেষ নিয়ামত দান করেন। যতক্ষণ তারা সেগুলো মানবকল্যাণে ব্যয় করে ততক্ষণ তিনি তাদের সেসব নিয়ামতের মধ্যে বিদ্যমান রাখেন। কিন্তু যখন তারা সে উপকার করা বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি তাদের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের দিয়ে দেন। (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৭)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে যাবে না।
যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার কষ্টগুলো থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)আল্লাহ তাআলা মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা যার হাতে দিয়েছেন অথবা যার নেতৃত্বে কিংবা যার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন পূরণ হতে পারে, সে যদি তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তার যে বান্দাকে কোনো নিয়ামত পরিপূর্ণরূপে দান করেন এবং তারপর লোকদের প্রয়োজন তার দিকে যোগ করে দেন, কিন্তু সে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার এমন আচরণের ফলে সে ওই নিয়ামত হাতছাড়ার ব্যবস্থা করে।
(তাবারানি, আওসাত, হাদিস : ৭৫২৯; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৮)
মহান আল্লাহ আমাদের মানবতার কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন।