• বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবমানুষের উপকার করেন যাঁরা আমৃত্যু নীরোগ এবং শারীরিক মানসিক প্রশান্তিতে থাকেন তারানাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের অভিযানে দেশীয় তৈরি বন্দুকসহ সন্ত্রাসী আটকসাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল বিএফআরআই পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মনোনীতসাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা : বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন বাড়ছেআজ শিল্পপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী”কক্সবাজারে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের মাঝে লাখ টাকার চেক বিতরণমুসলিম সমাজের আগাছা মোনাফেক মারা গেলে যারা জানাযা পড়ে এবং জানাযা পড়ায় তারা সকলেই মোনাফেকউখিয়ার গয়ালমারার এনজিওকর্মী আলমগীর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলাবিবাদ বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ড মহাপাপ

বিবাদ বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ড মহাপাপ

সম্পাদকীয়:
আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫

ফরিদুল মোস্তফা খান :


দম্ভভরে বিচরণ,অস্থিরতা অশ্নিলতা পৃথিবীতে বিবাদ বিশৃঙ্খলা অগ্নি সংযোগ ও হত্যাকান্ড ইসলামে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
ইসলাম বিশ্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ‘
ইসলাম’ মানে আত্মসমর্পণ করা।
আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা অর্জন করা। ইসলামপ্রিয় মুসলমানের পরিচয় দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ৬৪৮৪; মুসলিম : ৪০)। তাই পৃথিবীতে সত্যিকারার্থে সত্য ও ন্যায়নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য ও ইমানি দায়িত্ব।
সুতরাং মানবসমাজে কোনোরকম নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, উগ্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৬)
ইসলামের আলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত আইনে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা হলে আর কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না। পবিত্র কোরআনে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডকে মহাঅপরাধ সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত করলে তা স্বতন্ত্র। …কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ীভাবে থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৯২-৯৩)
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, তাদের জানমালের ক্ষতিসাধন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করাকে কবিরা গুনাহ আখ্যায়িত করে এবং এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষের প্রাণরক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩২)। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৩)। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)।
বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হলেই শুরু হয় নির্বিচার জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও মানবহত্যা। চলন্ত গাড়িতে ইট-পাথর ও রকমারি বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় জীবন্ত মানুষ। হরতাল-অবরোধ মানেই যেন গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ মারা। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ধ্বংসের মুখে জীবন-জীবিকা, বিপর্যস্ত মানুষ। জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন কাজে নেমে স্বল্প আয়ের মানুষ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। রাস্তা কিংবা গাড়িতে কখন কার ওপর বোমার বিস্ফোরণ ঘটে এ ভয়ে সবাই তটস্থ। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে সহিংসতা, পিকেটারদের ঢিলের আঘাতে মৃত্যু, বোমা মেরে, আগুন জ্বেলে মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীন করা, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ—এসব যাদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে তারা তো আমাদেরই কারও না কারও আত্মীয়স্বজন। এভাবে শান্তিময় পরিবেশকে ভীতিকর করে তোলা, জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করা, যে কোনো উপায়ে নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা, অথবা অপরাধী কোনো ব্যক্তিকেও বেআইনিভাবে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা হারাম। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার’ নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে এবং যে কারও জীবনরক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’ (সুরা মায়েদা : ৩২)। আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : ৯৩)
মানবহত্যা ও মানুষের সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে ইসলাম। ইসলাম অঙ্গহানি ও আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা নিসা : ২৯)। হত্যার প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ইসলাম। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, হিংসা কোরো না এবং একে অন্যের পেছনে পোড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিন দিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়।’ (বুখারি)। এমনকি হত্যার প্রারম্ভিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়তো শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারি)।
কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা জঘন্যতম কাজ। যারা এ কাজ করবে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে, তদ্রূপ তারা কিয়ামতের দিন রাসুলের শাফায়াত পাবে না, রাসুলের কথা না মানার কারণে। অগ্নিসংযোগ ও আগুনে পুড়িয়ে মারার ফলে একসঙ্গে কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত হয়, এর কোনো কোনোটি তো শিরকের পর্যায়ভুক্ত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো মানুষ, জীবজন্তু বা কোনো ফসল-গাছপালাকে আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেছেন। নবী (সা.) আরও বলেন, ‘আগুন দ্বারা শুধু আল্লাহই শাস্তি দেবেন, আগুনের রব (আল্লাহ) ছাড়া আর কারও আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।’ (বুখারি)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে কাউকে আগুনে পোড়ানোর অনুমতি দেননি। কারণ জাহান্নামে আল্লাহতায়ালা অপরাধীদের জন্য আগুনের শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। জাহান্নামকে আরবিতে ‘নার’ বা আগুন বলা হয়েছে। তাই এ শাস্তি কোনো মানুষ দিতে চাইলে এতে আল্লাহর বিশেষ শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতায় যেন তার সমাসীন হওয়ার দাবি চলে আসে। তাই কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া নিষেধ।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন