মনির ইউসুফ/মামুন রশীদ বাবু
কক্সবাজার পর্যটন শহরে সৈকতের ঢেউ, পাহাড়ের সৌন্দর্য আর স্বপ্নময় প্রকৃতির মাঝেও লুকিয়ে আছে অন্ধকার এক জগত—যেখানে তরুণী শিক্ষার্থীরা বিয়ের প্রলোভনে পড়ে ভয়ানক ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। এই ভয়াবহ চক্রের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে ‘জায়ান বাবু’ নামক এক যুবকের নাম।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর এলাকার ছেলে জায়ান বাবু( প্রকাশ বাবু) টার্গেট করে কোমলমতি ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ নারীদের প্রলোবন দেখিয়ে ভয়ংকর প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারণ ও পরে তা নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে উঠেছে জায়ান বাবুর বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের নিশানায় রেখে পরিকল্পিত ফাঁদ
জায়ান বাবু নামে পরিচিত এই যুবক নিজেকে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ও ভালোবাসাপূর্ণ জীবনসঙ্গী হিসেবে উপস্থাপন করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থী তরুণীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতেন। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেমের অভিনয়। মেয়েটি যখন বিশ্বাস করতে শুরু করতো, তখনই শুরু হতো পরবর্তী ধাপ—বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে ডেকে এনে শারীরিক সম্পর্ক করা হয়।
কক্সবাজারের কিছু আবাসিক হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় এই চক্র তরুণীদের একটি নির্জন রুমে নিয়ে যেত। সেখানে তাদের শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতো জায়ান। অনেক সময় মাদক খাইয়ে বা অজান্তেই ভিডিও ধারণ করা হতো গোপন ক্যামেরায়। এরপর শুরু হতো ভয়াবহ ব্ল্যাকমেইল।
ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই তরুণীদের একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হতো। কেউ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক না করার দ্বিমত পোষণ করলে হুমকি দিতো, আবার কেউ কেউ মান-ইজ্জত বাঁচাতে চুপ করে সহ্য করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি আসতো— ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাবে বলে।
আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বারবার পার পেয়ে যাওয়া
জায়ান বাবুর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই বলছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা হোটেল ব্যবসায়ীদের ছত্রছায়ায় এই চক্র বহুদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে।
এই ঘটনায় সমাজে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক, এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন, “ভালোবাসার নামে এমন প্রতারণা রোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
জায়ান বাবু ও তার চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং অপরাধে জড়িত হোটেল ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। এই চক্রকে যদি এখনই ধ্বংস করা না যায়, তাহলে কক্সবাজারের সুনাম আর নিরাপত্তা—উভয়ই হুমকির মুখে পড়বে।