আরবি নবম মাস “রমজান ” এই মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে অসংখ্য লেখনি পরিলক্ষিত হয়, তবুও আমাদের জীবনে এই মাসের শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ায় বার বার নিজেদের মধ্যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মাহে রমজান কোরআন নাজিলের মাস। শুধু কোরআনই নয়, এ মাসের সঙ্গে অন্য আসমানি কিতাবের সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যে চারটি প্রধান আসমানি কিতাব নাজিল করেছিলেন, এর সবই মাহে রমজানে অবতীর্ণ হয়েছে। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহ রমজানের পরিচিতি তুলে ধরে বলেছেন, ‘মাহে রমজান, যে মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে কোরআন…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
এই মাসে বান্দার জন্য আল্লাহ একটি মহিমান্বিত রাত দিয়েছেন যার সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ নিশ্চয়ই আমি এই (কুরান) নাযিল করেছি কদরের রাতে ( সুরা: কদর আয়াত ১)
সেই রাতের ফজিলত হচ্ছে ; কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম (সুরা: কদর আয়াত ৩) এই রাত কয় হাজার এর সমান তার কোন নির্ধারিত নেই বলেছেন, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সুতরাং, আল্লাহর কাছে অগনিত সময়ের নেকি বা প্রতিদান দেওয়া কোন ব্যাপার না। এই রাতকে আল্লাহ আরো বলেছেন, আমি একে ( কুরান) একটি মোবারক বা বরক পূর্ণ রাতে নাযিল করেছি(সুরা:দুখান আয়াত ৩)।
এই রমজান মাসকে ঘিরে আল্লাহর এই বর্নাঢ্য আয়োজন বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপার সুযোগ।
এই মাসে আল্লাহ বান্দার জন্য করনিয় ঠিক করেছেন।মুসলিম উম্মাহর জন্য এই মাসে সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে।
“ওহে যারা ঈমানদার ঘোষণা দিচ্ছ (শোনো) তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো। যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, উদ্দেশ্য এই যে, তোমরা যেন তাকওয়ার শিক্ষা লাভ করতে পার” (সুরা: বাকারা আয়াত ১৮৩) পরবর্তী আয়াত সমুহে স্ব বিস্তারে বলা আছে সকল আহকাম বা বিধান সমুহ।
আমরা সকলে জানি সিয়াম বা রোজা কি! তার আলোচনা স্কিপ করলেও চলবে।
রমজান মাসে আল্লাহ আমদের কোন ধরনের তাকওয়া অর্জন করার কথা বলেছেন? তা আমরা কিভাবে অর্জন করতে পারি?
সিয়াম পালন হলো সিয়াম সাধনা যাতে আমরা আত্মার পরিশোদ্ধির মাধ্যমে নিজের স্বত্বাকে দমাতে পারি। আল্লাহর বিধান পালনে নিজেকে উপযোগী করে তুলতে পারি, সেই লক্ষে আল্লাহ ভীতি অর্জন করার নাম তাকওয়া। মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, মিতাচার, মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়।
যেভাবে আমরা এই পরম মহত্বের দিকে নিজেকে ধাবিত করব; রমজানে বিশেষ বিশেষ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে—সিয়াম সাধনা, তারাবি, রোজাদারকে ইফতার করানো, ইতিকাফ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, সহমর্মিতা প্রকাশ, শবেকদর অন্বেষণ, ওমরাহ পালনসহ বহু ইবাদতের বিধান রয়েছে। আল্লাহ ধনীদের নির্দেশ করেছেন তার সম্পদের যাকাত দিতে গরিবের প্রতি সুবিচার মুলক তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে যার বিস্তারিত আলোচনা ( সুরা হাজ্জ ৭৭—৭৮, সুরা আল আম্বিয়া : ৭৩, সুরা মরিয়ম : ৫, সুরা আরাফ: ১৫৬ ইত্যাদি) আয়াতে করা হয়েছে।
মহা সত্য আল কোরানে যা হাজার বছর আগে থেকে বিধান করেছেন তা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অটোফেজি বলে ২০১৬ সালে আবিষ্কার করেন।অটোফেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ#অটো ও #ফাজেইন থেকে।#বাংলায়_এর_অর্থ_হচ্ছ—আত্ম ভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা।উপবাসের সময় আমাদের শরীরের সক্রিয় কোষ গুলো চুপচাপ বসে না থেকে সারা বছরে তৈরী হওয়া ক্ষতিকারক আর নিষ্ক্রিয় কোষগুলোকে খেয়ে ফেলে শরীরকে নিরাপদ আর পরিষ্কার করে দেয়। এটাই ‘অটোফেজি।
‘অটোফেজি আবিষ্কারের পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের বা ধর্ম মানে না অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সারা বছরে বিভিন্ন সময়ে ‘অটোফেজি করে শরীরটাকে সুস্থ রাখতে#জেনে_অবাক_হবে, ‘অটোফেজি তে ক্যান্সারের জীবণুও মারা যায় !
‘অটোফেজি আবিষ্কার হলো ২০১৬ তে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা এখন ‘অটোফেজি করছে এর উপকারীতা জেনে । আর মুসলিমরা ‘অটোফেজি করে আসছে হাজার বছর ধরে কিছু না জেনে; শুধু বিশ্বাস করে ।অনেক কিছুতেই হয়তো আপনি মানে খুঁজে পাননা কিন্তু এটাই সত্য যে – ইসলামে অকল্যাণের কিছু নেই |
সিয়াম বা রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে সারা বছর। মুমিন জীবনে তার বিকল্প নেই, যা রমজান মাসে উপার্জন করছি তা সারা বছর আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেস্টা করতে হবে। সেই নারীর মত হওয়া যাবেনা, যে শক্ত করে সুতো পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে।
মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে। পরিশেষে ঈদের দিনের যথাযথ হক আদায় পূর্বক পবিত্র মাহে রমজানকে বিদায়ের সাথে সাথে আবার রমজান পাওয়ার আখাংকা নিয়ে নিজেকে মুত্তাকিনদের দলে সামিল করতে পেরেছি কি না তা অনুধাবন করতে হবে।