• শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ খবর
কক্সবাজার সার্চ মানবাধিকার সোসাইটির পক্ষে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিতকক্সবাজার থানা পুলিশের অভিযানে চাকুসহ ৫ ছিনতাইকারী আটকসাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তি ও সম্মাননা দেবে বিএমএসএফআইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বাহারুল আলমনতুন আইজিপি বাহারুল আলমবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস : স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর কোনো বিকল্প নেইদৈনিক সাঙ্গু ও একজন স্বপ্নসফল সম্পাদক কবির হোসেন সিদ্দিকীউত্তর কুতুবদিয়া পাড়ায় আগুন লেগে দুটি ঘর পুড়ে ছাই,ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০ লক্ষ টাকাসিফাত উদ্দিন উখিয়ার এবং বিমল চাকমা ঈদগাঁও’র নতুন ইউএনওনাজিম উদ্দিন কুতুবীকে বর্ষসেরা সাংবাদিক পুরষ্কার প্রদান:কক্সবাজারবাণী পরিবারের অভিনন্দন

‘স্বামী সন্তানকে হারিয়েছি, প্রাণ বাঁচাতে আসতে বাধ্য হয়েছি’

মনসুর আলম মুন্না :
আপডেট : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
Oplus_131072

মনসুর আলম মুন্না ( কক্সবাজার )


বাংলাদেশে চলে আসার সময় স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছি। এক পলকের জন্যও আর দেখতে পারিনি তাদের। কোথায় হারিয়ে গেছে নিজেও জানি না। প্রাণ বাঁচাতে তিন বছরের মেয়ে আজিজাকে কোলে নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। আমি এখন নিঃস্ব। এদেশে ঠাঁই না হলে হয়তো আমিও মরে যেতাম।

ঠিক এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রোহিঙ্গা নারী গুরা বানু। প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে কিছুদিন আগে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছেন এই নারী। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলেছেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’র প্রতিবেদকের সঙ্গে। জানিয়েছেন সেখানকার সংঘর্ষের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা।

চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ গুরা বানুর। বলেন, আমার পাঁচ বছরের মেয়ে রশিদা তার বাবার কোলে ছিল। বাবা মেয়ে দুইজনকে হারিয়ে ফেলেছি। বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে তাও জানি না। গায়ের (শরীর) কাপড় নিয়েই বাংলাদেশে এসেছি। আমার দুচোখের সামনে অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। সাগরে নৌকা ডুবে অনেক নারী ও শিশু মারা গেছে। আহারে!

অসহায় কণ্ঠে গুরা বানু বলেন, মিয়ানমারে অনেক দিন না খেয়ে ছিলাম। দিন দিন চোখের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে। সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশে চলে আসলাম। তা-ও রক্ষা হলো না আমার স্বামী সন্তানের।

টেকনাফের ২৬নং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন গুরা বানু। তিনি মিয়ানমারের মংডু ফৌজি পাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুই মেয়েসহ গুরা বানুর পরিবারে চারজন সদস্য ছিল।

২৬নং শালবাগান রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মুখে পালিয়ে এসেছেন অনেক নতুন রোহিঙ্গা নারী ও শিশু।

গুরা বানু বলেন, যতবার দেখেছি মিয়ানমার দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হলে সবসময় আমাদের ওপর হামলা নির্যাতন শুরু হয়। আমরা কি দোষ করেছি। আমাদের তো এই দেশে আসার কথা ছিল না। অথচ এখন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে অনেকে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। তাই চলে আসলাম।

শালবাগান ২৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আয়াছ বলেন, মিয়ানমারের যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছে। তাদের আত্মীয়-স্বজন ক্যাম্পে রয়েছে, সেখানে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের জন্য কিছু করতে পারছি না। কারণ এইটা আমাদের দেশ না। তাদের ওপর নির্যাতন না হলে কেউ বাংলাদেশে চলে আসতেন না। তাদের ধন-সম্পদ রেখে শুধু গায়ের (শরীর) কাপড় নিয়েই চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।

রোহিঙ্গা মাঝি বদরুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছে তাড়িয়ে দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সামনে রোহিঙ্গাকে গুলি করে মারছে। যে কারণে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে চলে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোহিঙ্গারা টেকনাফের জন্য অশনি সংকেত। দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। চুরি, ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্য, অস্ত্র ইয়াবা কারবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। দ্রুত মিয়ানমারে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে জান্তা বাহিনীর লড়াই বিষয়ে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইনের দেয়া এক বক্তব্যে তিনি জানান, মিয়ানমারে সংঘাতের পর টানা এক সপ্তাহ পর সোমবার থেকে আগের মতোই বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। এখন তা আরও বিকটভাবে শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা বর্ষণের ফলে টেকনাফের ঘর-বাড়িও কাঁপছে।

সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে উল্লেখ করে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের আমরা প্রতিহত করছি।

গেল মাসে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এক বক্তব্যে বলেছেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয়ের জন্য ছুঁটে যাচ্ছে। এমনিতে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখানে আছে। নতুন করে আবার এই বোঝা বাড়লে অবশ্যই হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই জানিয়েছেন, মংডু শহরের সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলে নিতে চাইছে আরাকান আর্মি। আর তাই দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির পাশাপাশি মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গ্রেনেড–বোমা ছোড়ার ঘটনা ঘটছে।

অনেকেই জানান, আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের পাশের পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখল করে ৫০–৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে। কেবল তাই নয়, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করে দেশ ছাড়ার‌ও আল্টিমেটাম দিচ্ছে আরাকান আর্মির সদস্যরা।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন