• সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
কক্সবাজারের নতুন ডিসি সালাউদ্দিন আহমেদ বন্যার্তদের সেবায় নিঃস্বার্থ পেশাগত দায়িত্ব ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দুই সেনা  সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ করলেন সেনাবাহিনী প্রধান কক্সবাজারে নবাগত পুলিশ সুপারের যোগদান : ৪ থানার ওসিকে প্রত্যাহার সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়নের পর প্রত্যাহার পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যান চলাচল বন্ধ সাংবাদিকতাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা গণভবন পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা কক্সবাজারে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অপহরণকারী চক্র,অপরাধীদের শেষ কোথায়? রামু প্রেস ক্লাবর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন জেলা প্রেসক্লাব কক্সবাজারের তৌহিদ বেলাল সভাপতি ও রফিক মাহমুদ সেক্রেটারি

ডিবির এসআই আক্রামের রোষানলে সাংবাদিক রফিকের সর্বনাশ

স্টাফ রিপোর্টার
আপডেট : বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল । এই সময়ে ময়মনসিংহে কর্মরত পুলিশের এক উপ পরিদর্শকের (এসআই) পৃষ্ঠপোষকতা ও সংশ্লিষ্টতায় ঘটে মাদকের জমজমাট ব্যবসা । যৌনপল্লীতে নারী পাচারের ঘটনা । সন্ত্রাস আর অস্ত্রের ঝনঝনানিসহ অপরাধ কার্যক্রম । এই অপরাধ কার্যক্রমের পেছনে ছিল যার হাত তিনি এসআই আক্রাম হোসেন । এসব অপরাধ কার্যক্রমে ছিল নিজের প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ সম্পৃক্ততা । এসবের সাথে যুক্ত করেন গ্রেপ্তার বাণিজ্য । হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা । সেই সময়ে র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয় অস্ত্র ও বিপুল মাদক ও গ্রেপ্তার হয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই । এসআই আক্রাম হোসেনের এহেন কর্মকান্ডের সংবাদ প্রকাশ হয় দৈনিক ময়মনসিং প্রতিদিনহসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে । এতেই আক্রামের রোষানলে পড়েন দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক, দৈনিক আমাদের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি খায়রুল আলম রফিক । দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের ধারাবাহিকতায় শহরের চরপাড়ায় মাদক কারবারিদের সাথে এসআই আকরাম হোসেনের ঘনিষ্টতা বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় । সেসময় এসআই আক্রাম হোসেন কর্মরত ছিলেন ৩নং ফাঁড়ি পুলিশে । এসব সংবাদে তার ঘুষ বাণিজ্য ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যে ধ্বস নামে । ক্ষুব্ধ হন সাংবাদিক রফিকের ওপর । এ থেকেই একের পর এক রোষানলে পড়তে থাকেন সাংবাদিক রফিক । এরই মাঝে আক্রাম হোসেন যোগদান করেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশে । কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এই এসআই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন । উপরোক্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাত্রা বাড়িয়ে দেন । জেলার বিভিন্ন স্থানে তার নিয়ন্ত্রিত ও সুবিধাভোগী মাদক ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও নিরীহ মানুষকে মাদক কারবারি হিসাবে আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তার করে এনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন । মানসম্মানের ভয়ে গ্রেপ্তারের শিকাররা আক্রাম হোসেনকে টাকা দিতে বাধ্য হন । আর যারা তার দাবীকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন গ্রেপ্তারের পর থেকে তাদের জীবন থেকে ততদিনে চলে গেছে দর্গি সময়। কারাগারে বন্দী থেকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন তারা। দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনে আক্রামের গ্রেপ্তার বাণিজ্যেও সংবাদ শিরোনাম হয় । ঐ সময় ডিবির ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, আশিকুর রহমান ও মোখলেছুর রহমান । সেময় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করে আক্রাম বাগিয়ে নেন শ্রেষ্ঠ এসআইয়ের পুরষ্কারও । সুচতুর এই এসআইয়ের কর্মকান্ড নজর এড়াতে পারেনি তৎকালীন পুরিশ সুপার নুরুল ইসলাম পিপিএমের । এসপি তাকে বদলী করেন জেলার মুক্তাগাছা থানায় । আক্রাম মুক্তাগাছায় যোগদান না করে সুযোগ খুঁজতে থাকেন । এরই মাঝে বদলী হন এসপি নুরুল ইসলাম । এই সুযোগে তিনি আবারও যোগদান করেন ময়মনসিংহ ডিবিতে । ক্ষমতার দম্ভে স্বঘোষিত ডন হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে থাকেন । হয়ে উঠেন বেপরোয়া । সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে আবারও তার রোষানলে পড়েন সাংবাদিক রফিক । শুধু রফিকই নন, সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম তার মতো আরও অনেকেরই জীবন আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । অনেকে তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বিপর্যস্ত ।
এসআই আক্রাম হোসেন সাংবাদিক রফিককে আটক করে হেফাজতে রাখার নামে অকথ্য নির্যাতন চালায় যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আক্রামের যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলক ৩টি মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই মাস থাকতে হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে । এরআগে তার চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন করে এসআই আক্রাম হোসেন ।

২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর খায়রুল আলম রফিককে গ্রেপ্তার করে এসআই আক্রাম হোসেন । গ্রেপ্তার করার পর থেকেই খায়রুল আলম রফিকের চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় । নির্যাতনের ছবি তুলে প্রতিপক্ষের হাতেও তুলে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা । এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় । এরপর রফিককে আসামি করে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মামলা । এসআই আক্রাম হোসেন অমানুষিক নির্যাতন করে সাংবাদিক রফিককে অন্ধ ও পঙ্গু করে দিয়েছে । রফিকের দুচোখ ও পেছন থেকে দুই হাত বেঁধে ডিবি কার্যালয়ের ফ্লোরে ফেলে আলমারীর সাথে হেন্ডকাপ পড়িয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাত পা ও কোমড়ে বেধড়ক পিটুনি, পায়ের তালুতে , গরম পানি ঢুকিয়ে দেওয়া, কলম দিয়ে আঙুলের নখে চাপ দেওয়া ও নখ উপড়ে ফেলা, ফ্লোরে চিৎ করে শুইয়ে হাত-পা চেপে ধরে নাকে-মুখে লাথি এবং মুখের ভেতরে গামছা ঢুকিয়ে নির্যাতন করে আক্রাম হোসেন। এতে সাংবাদিকের রফিকের যৌনশক্তি হারিয়েছে যাওয়ার মত । শরীরের বিভিন্নস্থানে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। চোখ নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও চোখ,কান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন ।
সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক জানান, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটের বিপরীত দিকে আমি অবস্থান করছিলাম । এসআই আক্রামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি কালো গাড়িতে করে আমার পত্রিকার কার্যালয়ে নিয়ে যায় । সেখানে থাকা আমার জমি ক্রয়ের দলিল, ব্যাংকের চেক ও কম্পিউটার জব্দ করে । দলিল ও ব্যাংক চেক প্রতিপক্ষের কাছে তুলে দিয়ে জব্দ দেখানো হয় শুধু কম্পিউটার । সেখান থেকে আমাকে নেয়া হয় ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পুরাতন গুদারাঘাটস্থ দুর্গম চর এলাকায় । দুচোখ বেঁধে দু হাত পেছনে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয় । এসময় আক্রাম হোসেনের মোবাইলে একজন ফোন করে বলে যে, এখন আর ক্রসফায়ারে দেয়ার দরকার নাই । টিভিতে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে । এসআই আক্রাম তখন গালি দিয়ে বলে যে, সাংবাদিকের বাচ্চা , অসভ্যের বাচ্চা । তুই আজ বেঁচে গেলি । টেলিভিশনে সংবাদ হওয়ায় কারণে । এসআই আক্রামের নেতৃত্বে রফিককে নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে । ডিবি অফিসে একটি আলমারির নিচে তাকে ফেলে রাখে । এসময় আক্রাম সংবাদিক রফিককে উলঙ্গ করে ভিডিও ধারন করেন ও ছবি তুলেন । সেসব ছবি প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেন আক্রাম হোসেন । ভিডিও রেখে দেন নিজের কাছেও । সাংবাদিক রফিক তার চোখ বাঁধা অবস্থায় শুনতে পায় কয়েকজনকে আক্রাম বলছে, তোমরা প্রত্যেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়ে যাও ।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন

ই-পেপার