স্টাফ রিপোর্টার : দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক, দৈনিক আমাদের কন্ঠের ক্রাইম চিফ ও বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র পরিষদ (বনেক) সভাপতি এবং বাংলাদেশ মানবতা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো: খায়রুল আলম রফিকের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন । ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক(এসআই) আক্রাম হোসেন এই সাংবাদিককে আটক করে হেফাজতে রাখার নামে অকথ্য নির্যাতন চালায় যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সাংবাদিক নির্যাতনকারি এই এসআইকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে দাবি তাদের। ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের এসআই আক্রাম হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা, মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার বাণিজ্য এসব অপরাধমূলক সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩টি মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই মাস থাকতে হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে । এরআগে তার চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন করে এসআই আক্রাম হোসেন ।
ময়মনসিংহে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির এসআই আক্রাম হোসেনের বিরুদ্ধে নিজের সোর্স দিয়ে মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এসআই আক্রাম খায়রুল আলম রফিকের উপর ক্ষুদ্ধ হয় । তার রোষানলে নৃশংসতার শিকার হন সাংবাদিক রফিক । ২০১৮ সালে সংবাদ প্রকাশের জেড় ধরে ঐবছরের ২৯ নভেম্বর খায়রুল আলম রফিককে গ্রেপ্তার করে এসআই আক্রাম হোসেন । গ্রেপ্তার করার পর থেকেই খায়রুল আলম রফিকের চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় । নির্যাতনের ছবি তুলে প্রতিপক্ষের হাতেও তুলে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা । এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় । এরপর রফিককে আসামি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মামলা । এসআই আক্রাম হোসেন অমানুষিক নির্যাতন করে সাংবাদিক রফিককে অন্ধ ও পঙ্গু করে দিয়েছে । রফিকের দুচোখ ও পেছন থেকে দুই হাত বেঁধে ডিবি কার্যালয়ের ফ্লোরে ফেলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাত পা ও কোমড়ে বেধড়ক পিটুনি, পায়ের তালুতে , গরম পানি ঢুকিয়ে দেওয়া, কলম দিয়ে আঙুলের নখে চাপ দেওয়া ও নখ উপড়ে ফেলা, ফ্লোরে চিৎ করে শুইয়ে হাত-পা চেপে ধরে নাকে-মুখে লাথি এবং মুখের ভেতরে গামছা ঢুকিয়ে নির্যাতন করে এস আই আক্রাম। এতে রফিকের যৌনশক্তি হারিয়ে যেতে পারে । শরীরের বিভিন্নস্থানে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। প্রায় চোখ নষ্ট হয়ে গেছে । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও চোখ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন ।
সাংবাদিক মহলে খায়রুল আলম রফিক জানান, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটের বিপরীত দিকে আমি অবস্থান করছিলাম । এসআই আক্রামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি কালো গাড়িতে করে আমার পত্রিকার কার্যালয়ে নিয়ে যায় । সেখানে থাকা আমার জমি ক্রয়ের দলিল, ব্যাংকের চেক ও কম্পিউটার জব্দ করে । দলিল ও ব্যাংক চেক প্রতিপক্ষের কাছে তুলে দিয়ে জব্দ দেখানো হয় শুধু কম্পিউটার । সেখান থেকে আমাকে নেয়া হয় ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পুরাতন গুদারাঘাটস্থ দুর্গম চর এলাকায় । দুচোখ বেঁধে দু হাত পেছনে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয় এসআই আক্রামের নেতৃত্বে । এসময় আক্রামের মোবাইলে একজন ফোন করে বলে যে, এখন আর ক্রসফায়ারে দেয়ার দরকার নাই । টিভিতে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে । এসআই আক্রাম তখন গালি দিয়ে বলে যে, সাংবাদিকের বাচ্চা , অসভ্যের বাচ্চা । তুই আজ বেঁচে গেলি । টেলিভিশনে সংবাদ হওয়ায় কারণে ।
সেখান থেকে এসআই আক্রামের নেতৃত্বে রফিককে নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে । ডিবি অফিসে একটি আলমারির নিচে তাকে ফেলে রাখে । রফিক তার চোখ বাঁধা অবস্থায় শুনতে পায় কয়েকজনকে আক্রাম বলছে, তোমরা প্রত্যেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়ে যাও । ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রচার কর যে, একে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করা হয়েছে । এসময় তারা বলে, ৭১ টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে চাঁদাবাজির অভিযোগে রফিক আটক । কিন্তু রহস্যজনক কারণে সাংবাদিক রফিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে( আইসিটি) মামলা দেয়া হয় । মামলার বাদী করা হয় একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে । সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক বলেন, ডিবি কার্যালয়ে দীর্ঘ ১৬ ঘন্টা খাবার এমনকি পানিও দেয়া হয়নি আমাকে । কান্নকাটি শুরু করি । এসময় ডিবির ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন দয়াপরবশ হয়ে আমার খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেন । এরপর আরো ১টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় । ২মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাই ।
রফিক আরো বলেন, একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, সেদিন রাত ১২টার দিকে আমাকে ক্রস ফায়ারে দেয়ার চেষ্টা করে আক্রাম । আমাকে হত্যা করতে আক্রাম হোসেন ১৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় । এজন্য ৭লাখ টাকা অগ্রিম নেয় সে । এখনও আক্রাম আমাকে হুমকি দিচ্ছে । আমাকে শাশায় । বলে তুই নেত্রকোনা থেকে এসেছিস । কুত্তার বাচ্চা তুই বাড়াবাড়ি করিস । ময়মনসিংহ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের জামালপুরের লোকজন । এটা জেনে রাখিস । এখনও আক্রাম আমাকে জানে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে ।
রফিক বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদীগণ স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মামলা আপোষ করেছেন । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসআই আক্রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি । অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে বদলী করা হয় জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশে, এর ২০দিন পর নেত্রকোনা এবং এক মাস পর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে । জানা যায়, প্রভাবশালী ও ময়মনসিংহে ডন হিসাবে খ্যাত এসআই আক্রাম হোসেন মাদক ব্যবসা , গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও নিরীহদের ধরে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা আদায় করে ময়মনসিংহ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন চকচকে বাড়ি । এছাড়াও তার রয়েছে নামে বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স ও অগাধ বিত্ত বৈভব ।
এদিকে আদালত থেকে জামিন ও মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে সাংবাদিক রফিক হারিয়েছেন ভিটে বাড়ি । বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সন্তানদের পড়া লেখা এবং ব্যবসা। পরিবার নিয়ে চরম অভাব অনটনে দিন কাটছে তার।