নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরের গোঁয়াখালী এলাকায় গুদিকে ঘাট বানিয়ে টোলের নামে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। নির্ধারিত চাঁদা না দিলে নৌকায় ওঠা-নামা করতে দেয়া হয় না কোন পণ্য। তাই প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হচ্ছে। মাস শেষে এ খাতে চাঁদার অংক দাঁড়ায় প্রায় ছয় লাখ টাকায়। চাঁদাবাজির এসব টাকা মাস শেষে ভাগাভাগি করেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুতুবদিয়া উপজেলার তিন লাখ মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগানের অর্ধেক আসে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে। বড় বড় ট্রলার দিয়ে এসব পণ্য সরাসরি কুতুবদিয়া নেয়া হয়। বাকি অর্ধেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, তরিতরকারি, কাঠ, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু সংগ্রহ করা হয় পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে। যার অধিকাংশ সংগ্রহ করা হয় পেকুয়া বাজার থেকে। বিকল্প পথ না থাকায় এসব পণ্য পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ভোলা খাল দিয়ে কুতুবদিয়া নেয়া হয়। দুরত্ব কমাতে ও সহজে পরিবহনের জন্য পেকুয়া বাজারের অদূরের গোঁয়াখালী রাবারড্যামের পশ্চিম পাশের নদীর চর ব্যবহার করে এসব পণ্য নৌযানে তোলা হয়।
কিন্তু সেখানে স্থানীয় একটি চক্র প্রতিটি পণ্য ভেদে টোলের নামের চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌকায় পণ্য তুলতে দেয়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আট কিলোমিটার দূরের মগনামা ঘাটে পণ্য পরিবহন করে নিয়ে নৌকায় তুলতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায় তিন-চার গুণ।
কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যবসায়ী সাকের উল্লাহ বলেন, সরকারীভাবে ইজারা দেওয়া ঘাট না হলেও ওই স্থান দিয়ে নৌকায় পণ্য তুলতে গেলে সকল পণ্যের ওপর চাঁদা দাবী করেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। ফরহাদ নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রকাশ্যে দিবালোকে এ চাঁদাবাজি করেন। সময় বাঁচাতে ও দুরত্ব কমাতে নিরুপায় হয়ে তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে আমরা বাধ্য হই। এতে পণ্যের মূল্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। কুতুবদিয়া গিয়ে এসব পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গরু ওই স্থান দিয়ে নৌকায় তুলতে একশো টাকা, প্রতিটি ছাগল পঞ্চাশ টাকা, প্রতিটি গাছ তিনশত টাকা, এক গাড়ি লাকড়ি পাঁচশত টাকা, এক বান্ডেল পলিথিন বিশ টাকা, এক গাড়ি বিস্কুট পাঁচ শত টাকা, এক ঝুঁড়ি গাছের চারা পঞ্চাশ টাকা, এক টন লোহা দুইশো টাকা ও এক কার্টুন ওষুধ একশত টাকা দিতে হয়। প্রতিদিন এভাবে তারা ১০-২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন।
টোলের নামে চাঁদা আদায়ে জড়িত আওয়ামীলীগ নেতা মো. ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বৈধভাবে গুদিটি দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে টোল আদায় করছি। আদায় করা এসব টাকা অধিকাংশ শ্রমিকদের দিয়ে দিতে হয়। কারণ, তারা মালামাল গুলো নৌকায় তুলে দেন। এখানে চাঁদাবাজির কিছু নেই। চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এব্যাপারে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ বলেন, ভোলা খালের রাবারড্যামের পশ্চিম পাশের অংশটি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ন্ত্রিত গুদি। তবে এটি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। এক টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়নি। স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের লিখিত সুপারিশে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে এটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেখাশোনার জন্য শ্রমের বিনিময়ে পণ্যবাহী নৌযান থেকে তারা ৫-১০ টাকা নিতে পারে। কিন্তু জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করাটা অন্যায়। বিষয়টি এতোদিন পরিষদের নজরে আসেনি।
পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুম্পা ঘোষ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।