ফরিদুল মোস্তফা খান
* মুক্তির অপেক্ষায় খুনি প্রদীপ
* কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইন ছিল
টর্চার সেল
প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী,আমলা কামলা পুলিশের তৎকালীন
আইজিপি-ডিআইজি এবং মিডিয়ার নাম ভাঙ্গিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন কক্সবাজারের সাবেক এসপি মাসুদ সিন্ডিকেট।
কারাগারের ভিতরে বাইরে মাদকসহ সকল অপকর্ম চলতো তাদের ছত্রছায়ায়।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য,এসপি মাসুদের শাসন আমলে কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মোট জনবলের চেয়ে নিজেদের নিয়োগ দেওয়া কথিত ভূয়া পুলিশ ছিল অগনিত।
পুলিশের ভূয়া ইউনিফর্ম, হ্যান্ডকাপ,ওয়ার্লেস,কালো গ্লাসের গাড়ি, অবৈধ অস্ত্র -শস্ত্র সবই ছিল তাদের।
এদের কারণে শুধু টেকনাফ কক্সবাজার নয়। বাংলাদেশের কারো জীবেনর নিরাপত্তা ছিল না।
এসপি মাসুদ ওসি প্রদীপ এমপি বদি,টেকনাফ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মাদকের আরেক গডফাদার নুরুল আলম,সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাশেদ,উখিয়ায় অবস্থানরত এমপির শ্যালক জাহাঙ্গীর,কালের কন্ঠের প্রতিনিধি তোফায়েল,হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী, টেকনাফের ভূয়া নাফ টিভির কথিত চেয়ারম্যান উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দাবিদার পুলিশের দালাল বাটপার নুরু সহ এই সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির প্রতিবন্ধকতা যাঁরাই সৃষ্টি করেছেন।
সে যেই হোক, যেখানেই তাকে পেয়েছেন সেখান থেকে তুলে নিতেন তারা।
নিয়ে যেতেন এসপি মাসুদ ও ওসি প্রদীপের টর্চার সেলে।
জানা গেছে,বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের এ্যাডিশনাল ডিআইজি হওয়া মাসুদ পুলিশ সুপার থাকা কালে কক্সবাজার পুলিশ লাইন অভ্যন্তরে কয়েকটি নির্ধারিত অন্ধকার কক্ষ ছিল।
যেখানে নিজেদের কিলিং মিশন বাস্তবায়নের জন্য তুলে আনা মানুষদের হাত পা বেধে নির্মম নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নিচতলা ডিবি অফিস ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কয়েকটি রুমে শুধু তুলে আনা হতভাগ্য মানুষদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চলত।
সিনেমার নিষ্ঠুর কোন কাহিনীকেও হার মানানো তৎকালীন পাষণ্ড এসপি মাসুদ সিন্ডিকেট কে নগদে যারা তুষ্ট করতে পেরেছেন।
তাদের অনেকেই হাতে পায়ে ধরে আল্লাহ খোদা ডেকে জীবনে বেঁচে গেলেও ক্রসফায়ার সহ বিভিন্নভাবে চিরতরে হারিয়ে গেছে বহু মানবজীবন।
এদের অনেকের লাশটাও ফিরে পাননি স্বজনরা।
ওসি প্রদীপ, মাসুদ,এমপি বদিদের মাসোহারা দিয়ে যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদেরকে হয় বাধ্যতামূলক আত্মসমর্পণ অতবা অস্ত্র মাদক দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
রুপকথার গল্প মনে হলেও সত্যি,এসপি মাসুদের আমলে কক্সবাজার পুলিশ লাইনের পেছনে গহীণ অরণ্যে অনেক মানুষকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে।
সেখানকার মাটি যদি কথা বলতে পারত নিশ্চয় তার স্বাক্ষী দিত।দেখিয়ে দিত খুনের স্বীকার মানুষের কঙ্কাল।
কক্সবাজার বালিকা মাদ্রাসার সামনে সৈকত সন্নিকট কবিতা চত্ত্বর এলাকা,মেরিন ড্রাইভ রোড,প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন সহ চট্টগ্রাম বিভাগের অলিগলি, পাহাড়-পর্বত, নালা নর্দমা,পথে ঘাটে যেসব অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যেত ওই সময়। তাদের বেশির ভাগই এই সিন্ডিকেটের হাতে নির্মম খুনের স্বীকার।
এতসব বিষয় পুলিশের তৎকালীন চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি গোলাম ফারুক কিছুই না জানার অজুহাতে এড়িয়ে গেছেন।
এই প্রতিবেদক তাদের অপকর্মের ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের কারণে ৬ টি সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম কারাগারে অবস্থানকালে দেখা গেছে, কারা অভ্যন্তরে বড় বড় যত মাদক সম্রাট, জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মী,চিহ্নিত খুনি সহ নানান অপরাধী রয়েছে।
তারা সকলেই নিজেদের প্রিয় অভিভাবক এসপি মাসুদ এবং বদি বন্দনায় উম্মাদ।
কারা অভ্যন্তরের দাগি দাগি সব অপরাধীরা দু হাতে টাকা খরচ করে জারাগারের অভাবী হুজুরদের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে হাত তুলে তাদের জন্য দুয়া করতেন।
তারা এসপি মাসুদ এবং বদি সিন্ডিকেটের সার্বিক সফলতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ক্ষান্ত হতেন না।
আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন বদিকে মন্ত্রী আর মাসুদকে আইজিপি করা হোক।
দেখা গেছে,আত্মসমর্পণের নামে প্রাণ রক্ষা করে দেওয়া অযুহাত দেখিয়ে এসপি মাসুদ এবং বদি সিন্ডিকেটের পুনর্বাসিত ১০২ মাদক সম্রাটের সম্রাট বদির ভাই আব্দু শুক্কুর সিআইপি সকলের কাছথেকে জনপ্রতি ১০/২০ লাখ টাকা করে তুলে প্রতি মাসে এমপি বদি এবং এসপি মাসুদ ও কালের কন্ঠের সাংবাদিক তোফাইলের মাধ্যমে কক্সবাজার প্রেসক্লাব তথা সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্য টাকা পাঠাত।
কারা অভ্যন্তরে শুক্কুরের এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজির জন্য সেখানে ১০২ মাদক সম্রাটদের মধ্যে কারা অভ্যন্তরে কয়েকবার মারামারি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের একজন মাদকাসক্ত সিনিয়র নেতার নামেও ইয়াবা ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে তুলা টাকা পাঠানো হত।
যা আত্মসমর্পণকৃত ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং উল্লেখিত গুণদরদের ব্যাক্তিগত মোঠুফোনের নাম্বার সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের ফেসবুক টাইমলাইন ও অপরাধীদের লাইক কমেন্টস্ শেয়ার দেখলে সত্যতা মিলবে।
জানা গেছে,মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর
কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে চার্জশিটে সুপারিশ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
চার্জশিটের বিভিন্ন বিষয় জানাতে ঢাকায় র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সেই সময় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
এতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের মিথ্যা মামলা ও নির্যাতেন বিষয় এবং টেকনাফের সাংবাদিকদের কোনঠাসায় লিপ্ত মাদকের নাফ টিভির ভূয়া চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাটপারের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
খুনের পরিকল্পনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ তৎকালীন পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেনের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ঘটনার পরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া ছিল অপেশাদারিত্ব। তিনি (এসপি) বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন। দায়িত্ব পালনে তার আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। এসব কারণে এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে চার্জশিটে সুপারিশ করা হয়েছে।
র্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ মদদে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খুন হন। টেকনাফে বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এ সম্পর্কে জেনে ফেলার কারণেই টেকনাফ থানায় পরিকল্পনা করে তাকে খুন করা হয়।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ইয়াবা বাণিজ্যের বিষয়টি জেনে যাওয়ায় সিনহা জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে প্রদীপের সঙ্গে কথা বলতে যান। তখন প্রদীপ সরাসরি হুমকি দিয়েছিল সিনহাকে। প্রদীপ ভেবেছিল, হুমকি দিলে সিনহা কক্সবাজার ত্যাগ করবে। কিন্তু কক্সবাজার ত্যাগ না করায় হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে এমনটিই পেয়েছেন।
খুনের পরিকল্পনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সিনহা মো. রাশেদ বন্ধুবৎসল ছিলেন। টেকনাফে তার ইউটিউব চ্যানেল চালুর অংশ হিসেবে গিয়েছিলেন। দ্রুতই তার সঙ্গে এলাকাবাসীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি টেকনাফের মানুষের ওপর প্রদীপ কুমার দাশের নির্যাতন-নিপীড়নের কথা জানতে পারেন। ইয়াবা কেনাবেচায় সম্পৃক্ততারও প্রমাণ পান। তার কাছে এমন কিছু তথ্য ছিল, যেগুলো প্রকাশ পেলে প্রদীপ কুমার দাশ অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যেতে পারতেন। এসবের ভিত্তিতে তিনি টেকনাফ থানায় প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে কথা বলতে যান। এ সময় প্রদীপ কুমার দাশ তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু টেকনাফ না ছেড়ে সিনহা তার কাজ চালিয়ে চান।
পরে প্রদীপ থানাতেই উপপরিদর্শক লিয়াকত ও তিন তথ্যদাতার সঙ্গে বৈঠক করেন। হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতেও প্রদীপই নির্দেশ দেন।
এছাড়া অভিযুক্তদের কয়েকজন ‘ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার’ চেষ্টা করেছেন-এমন মন্তব্য করে আশিক বিল্লাহ বলেন, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লিয়াকত তিন সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজের সঙ্গে হত্যা পরিকল্পনা নিয়ে সাক্ষাৎও করেছিলেন, সে তথ্যও তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পেরেছেন।
গুলি করার পর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতেই তাকে হাসপাতালে নিতে সময়ক্ষেপণ করা হয় এবং পরে লোক দেখাতে হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি বলেন, প্রদীপ সরকারি বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে কক্সবাজারে অভয়ারণ্য তৈরি করেছিল।
এদিকে সেদিন রোববার সকাল সোয়া ১০টায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। আদালত ২৬ পৃষ্ঠার চার্জশিটটি গ্রহণ করেছেন। মামলাটি তদন্ত করতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪ মাস ১০ দিন অর্থাৎ ১৩০ দিন সময় নিয়েছেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত ১৫ জনের মধ্যে টেকনাফ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাগর দে পলাতক। বাকি সব আসামি কারাগারে। গ্রেফতার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দেননি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশ ও রুবেল শর্মা। তদন্ত কর্মকর্তারা ৮৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের আলামত ও ডিজিটাল কনটেন্ট পর্যালোচনা করেছেন।
চার্জশিটে আসা বাকি ১৩ আসামি হলেন-এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাবেক এএসআই সাগর দেব।
৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ফাঁড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনার পর মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ ও রামু থানায় তিনটি মামলা করে। ওই তিন মামলায় সিনহা মো. রাশেদ এবং ডকুমেন্টারি নির্মাণে তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদক ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। তবে পুলিশের দায়ের করা মামলায় অভিযোগের ‘সত্যতা পায়নি’ র্যাব। তাই ওই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি চেয়ে র্যাব আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ১৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া মামলাটি করা হয়েছিল কক্সবাজার আদালতে। এটি করেন সিনহা মো. রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়ার।
সেই মামলায় দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় প্রদীপ ও লিয়াকতদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন কক্সবাজারের সাবেক ন্যায় বিচারক, নির্লোভ মানবিক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
ফলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রদীপরা বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হাই সিকিউরিটি সেলে থাকার কথা থাকলেও জানা গেছে,এসপির চেয়ারে থাকালে মাসুদের একটি প্রত্যায়নপত্র মূলে খুনীদের খুনীরা ডিভিশন পায়।
জানা গেছে, প্রদীপরা গ্রেফতারের পর থেকে এই কারণে ডিভিশন পেয়ে বর্তমানে কারাব্যন্তরে রাজার হালে রয়েছেন।
তারা বর্তমানে বাইরে থাকা এসপি মাসুদ এবং বদি তথা মাফিয়া সিন্ডিকেটের বদোন্নতায় আইনের ফাকফোকর দেখিয়ে উচ্চ আদালত থেকে মুক্তির প্রহর গুনছেন।
সুত্রমতে, সেখান থেকে বের হতে পারলে তারা বিদেশ পালিয়ে গিয়ে এসপি মাসুদ ও বদি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসা আরও জমজমাট এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটাবেন।
সেই এসপি মাসুদের পদোন্নতি :মাদক সম্রাটদের উল্লাস
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে ওসি প্রদীপ দাশের অন্ধকার জগতের তথ্য।
ক্রসফায়ার ‘বাণিজ্য’ ও মাদক ব্যবসায় মদত দেয়ার মাধ্যমে টাকা কামানোর নেশায় পরিণত হয়েছিল প্রদীপের।
কিন্তু তিনি কী একাই এই কাজ করেছেন? না। তার সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনও।
গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের ভাষ্যে উঠে আসা কক্সবাজারের সেই সাবেক এসপি মাসুদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে এ্যাডিশনাল ডিআইজি করেছে সরকার।
ফলে নিজেদের প্রিয় পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতিতে কক্সবাজারে মাদক সিন্ডিকেটে বিরাজ করছে উল্লাস।
সামাজুক যোগাযোগ মাধ্যমের টাইমলাইনে-তারা পদোন্নতি প্রাপ্ত এ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদ হোসেনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এদের কেউ কেউ গুণধর উক্ত পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তুলা ছবি পেইজবুকে আপলোড দিয়ে জানান দিচ্ছেন, আমরা এ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদ সাহেবের ঘনিষ্ঠ জন।
জানা গেছে, কক্সবাজারে কর্মরত থাকা কালীন এই এসপি মাসুদের আশকারায় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে ৬ টি সাজানো মামলা দিয়ে ক্ষান্ত হননি।তারা সাংবাদিক ফরিদুলকে পাশবিক নির্যাতন করে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা চেষ্টার পাশাপাশি ওসি প্রদীপসহ একাধিক সদস্য বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন দিনের পর দিন।
কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে দুর্নীতি, টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়া, বড় মাদক ব্যবসায়ীদের না ধরে চুনোপুঁটিদের ধরা,আত্নসমর্পণকৃত সেই ১০২ ইয়াবা গডফাদার থেকে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে গোপন মাসোহারা, ক্রসফায়ার বাণিজ্য, অভিজাত হোটেল থেকে চাঁদা আদায় ও সংশ্লিষ্ট জেলার জামায়াত নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
প্রশ্ন উঠছে, সিনহা হত্যাকাণ্ডে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের ভূমিকা নিয়েও।
ওসি প্রদীপ বা লিয়াকতের মতো কয়েকজনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ এলেও তাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা পুলিশ।
অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ থাকতো কক্সবাজারের এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি করার মাঝেই।
তাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সায় ছিল তৎকালীন সেই এসপি মাসুদের।
সুত্র জানায়,মাসুদের স্ত্রী জেনিফার মুনের নামে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়া ছাড়াও নামে-বেনামে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে একটি সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।
বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণ ওলানিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আব্দুল কাদের হাওলাদার ও অজুফা খাতুনের ছেলে এবিএম মাসুদ হোসেন ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
শিবিরের একজন নেতার মাধ্যমে তিনি ইসলামী ব্যাংকে চাকরি নিয়েছিলেন বলে তথ্য রয়েছে।
জোট সরকারের আমলে ২৪তম বিসিএসে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শ্বশুরের পরিচয়ে তিনি সুবিধা নেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য পেয়েছে।
সূত্র মতে, ইয়াবার নামে হয়রানি, মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় নইলে ক্রসফায়ারে দেয়াসহ নানা অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে।
কথিত আছে-উড়ন্ত ইয়াবা ডন হিসেবে চিহ্নিত ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে কোটি টাকার বিনিময়ে আত্মসমর্পণের নামে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার ছত্রছায়ায়।
অন্যদিকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে মাদক বহনকারী চুনোপুঁটিদের। এই কারণে এখনও ইয়াবার রাজ্য কক্সবাজারে যেমন ছিল ঠিক তেমনই রয়েগেছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজারে প্রায় ৩০০টি অভিজাত হোটেল রয়েছে।
এইসব হোটেল থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
যদি কোনো হোটেল মালিক ওই টাকা দিতে রাজি না হন তাহলে ওই হোটেলে অবৈধ কারবার হয়- এমন মিথ্যা দাবি দিয়ে বন্ধের হুমকি দেয়া হত।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, কক্সবাজার এলাকায় মাদকের যেসব ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছে তার অধিকাংশই খুচরা ব্যবসায়ী।
যারা ইয়াবার কারবার করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন, গড়েছেন বড় বড় রাজকীয় অট্টালিকা তারা থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অপারেশন শুরু হওয়ার আগেই তাদের পুলিশের পক্ষ থেকে সংকেত দেয়া হত বলে সূত্রের দাবি।
সরকারি সংস্থার তদন্ত সূত্র বলেছে, মহেশখালীর ৬৮ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিলের ওসি প্রদীপ।
এ ঘটনায় প্রদীপকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ থাকলেও ১৫ দিনের মাথায় প্রদীপকে টেকনাফের ওসির দায়িত্ব দেন এসপি মাসুদ।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গত ৩১শে জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করেন এসআই লিয়াকত। ঘটনার পরই লিয়াকত ও ওসি প্রদীপ এসপি মাসুদের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলেন। এ নিয়ে ওসি প্রদীপও কথা বলেন পুলিশ সুপারের সঙ্গে। তাদের কথোপকথনের অডিও প্রকাশ্যে আসায় এসপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ এবং পুলিশ বাহিনির ভাবমূর্তি নিয়ে দেশবিদেশে সীমাহীন সমালোচনার ঝড় উঠায়,কর্তৃপক্ষ তাকে কক্সবাজার থেকে বদলি করে রাজশাহী পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করেন।
এর আগে জব্দ করা হয়েছিল তার ব্যাংক একাউন্ট।
অবিশ্বাসয় হলেও সত্য, কক্সবাজারে মাদক ব্যবসায়ীদের অভিবাক খ্যাত উক্ত সাবেক এসপি মাসুদ হোসেন অনেকটা ভোল্ট পালটিয়ে রাজশাহী পুলিশ সুপার থেকে ডাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর গোয়েন্দা শাখার দায়িত্ব পান।
সর্বশেষ,কয়েকদিন আগে পুলিশের পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকার্তাদের তালিকায় তাকে এ্যাডিশনাল ডিআইজি করার সংবাদ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজারের সুশীল সমাজ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।