• শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
উখিয়ায় ইউএনএইচসিআরের স্থাপনার বিরুদ্ধে বন বিভাগের নোটিশ: কাজ বন্ধ করে গেইটে তালাকক্সবাজারে উৎসব মুখর আয়োজনে শেষ হয়েছে মহা সাংগ্রেইজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ পেলেন মুহাম্মদ আবু আবিদ৫১ একর আবাসন ও বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করতে পরিবেশ উপদেষ্টা বরাবরে বাপার স্মারকলিপিচোরাচালানকারী ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে নোট নিচ্ছি, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না- রামু থানায় স্বরাষ্ট্র সচিবপ্রতিটি মানুষের জীবন অমুল্য সম্পদ অপরাধ দমনে ইসলামের পদ্ধতি সর্বজনীনআমরা ঐক্যের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব: মির্জা ফখরুলসম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ-তুরস্কবিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিতবৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার : প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস :অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই, সমাজ পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩


ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আজ বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’২০২৩। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর এই দিবসটি পালন করা হয়। মিতব্যয়ি হওয়ার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিবছর এই দিনে পরিবার ও জাতির কল্যাণে সবাইকে মিত্যব্যয়ি হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।

১৯২৪ সালে ‘মিলানে’ অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেসে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটি পালন শুরু হয়। সেই থেকে সঞ্চয় ব্যাংক সমূহ আন্তর্জাতিক ভাবে দিবসটি পালন করে আসছে।

মূলত মিতব্যয় ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব সর্ম্পকে জনগণের মনোযোগ আর্কষণ করার উদ্দেশ্যে নিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও সরকারিভাবে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয় এবং জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী-সামজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিতব্যয়িতা মানে হলো ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম বা আয় বুঝে ব্যয়। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনও মিতব্যয়িতার অর্থ। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখ কোটি টাকা। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন ১৭ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ অপচয় করে কোটি কোটি টাকার খাবার। আর এর মাশুল দিতে হয় পথের পাশের মানুষগুলোকে।
১৯২১ সালে সর্বপ্রথম স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাতীয় সঞ্চয় দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে ১৯২৪ সালে ইতালির মিলান শহরে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের প্রতিনিধি। ২৯টি দেশের প্রতিনিধি বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও দৃঢ় করতে; মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে ও মানুষের মনে সঞ্চয়ের ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সহমত পোষণ করেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের শেষ দিনটিকে বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ১৯২৫ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে পালন করা হয় দিবসটি।
প্রাণিকুলে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাদের মাঝেও সঞ্চয়ের প্রবণতা রয়েছে। যদি পিঁপড়ার কথাই বলি, তাহলে দেখা যাবে তারা শীত আসার আগেই তাদের খাবারের মজুত করে রাখে যেন শীতে কষ্ট করতে না হয়। সঞ্চয়ের প্রবণতা কিছু প্রাণীর সহজাত ধর্ম। অন্যদিকে দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের সঞ্চয়ের শিক্ষা।

সঞ্চিত অর্থ বা আগামী দিনের জন্য সঞ্চয় আপনাকে দিতে পারে একটি সুরক্ষিত এবং চিন্তামুক্ত জীবন। ব্যক্তিগত সঞ্চয় একজন মানুষ বা একটি পরিবারের আর্থিক সুরক্ষাই নিশ্চিত করে না; দেশের অর্থনীতিকেও দৃঢ় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশে জাতীয় সঞ্চয় দিবস জনপ্রিয়তা পেতে থাকে এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অস্ট্রিয়ায় সঞ্চয়ের অফিসিয়াল ম্যাসকট ‘স্পেয়ারফ্রো’, যার ইংরেজি অর্থ ‘হ্যাপি সেভার’। এমনকি ১৯৭০ সালে ছোটদের শিক্ষামূলক পত্রিকা ‘স্পেয়ারফ্রো জার্নাল’ -এর প্রচার সংখ্যা চার লাখ কপি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো সঞ্চয় দিবস পালনে বিশেষ জোর দিয়ে থাকে। এসব দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে মানুষকে সঞ্চয়ী করে তোলার পেছনে যেমন রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তিতে গড়ে তোলার প্রয়াস।
তাই আসুন আমরা সকলেই ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপব্যয় পরিহার করি।পৃথিবীতে সম্পদহীন, বিত্তহীন লোকের সংখ্যা বেশি। বিত্তহীনদের চিত্তকে প্রফুল্ল করতে, বিকাশ ঘটাতে সম্পদশালীদের প্রতি সহানুভূতি জাগাতে মিতব্যয়িতার স্বপ্ন আমাদের দেখতেই হবে। কেবল দৈব দুর্বিপাক আর ধর্মীয় অনুশাসনের বাধ্যবাধকতার হিসাবে ঘুরপাক না খেয়ে কল্যাণকর মিতব্যয় জাতির স্বপ্নে বিভোর হওয়াই উত্তম পথ। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগাতে পারলেই অগ্রসর জাতির তকমা সকল মানুষের ললাটে ঝুলবে। অর্থের প্রাচুর্য আর সম্পদের বাহাদুরি থেকে বেরিয়ে আসার পথ উন্মুক্ত হবে। অন্যায়, অবৈধ পথে প্রাণপণে সম্পদ সংগ্রহের অপতৎপরতা রোধ হবে। সম্পদ আর প্রাচুর্য্য জীবনের সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নয়, তা উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। যদিও অর্থ উপার্জনের প্রবণতা ধনী, গরিব, কাঙ্গাল, ভিখারী সকলের মাঝেই দূরন্ত দুর্বার গতির। এখানে তৃপ্তির বিষয়টি মুখ্য, প্রধান হিসাবে বিবেচনায় আনা হয়। দীন-দরিদ্র, আড়াল-চাড়াল, ভুখা-নাঙ্গারাও অর্থ উপার্জন করে।

অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই, বরং সমাজ, পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না। বিজ্ঞানী ফ্রাকলিনের এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ছোট ছোট ব্যয় সমদ্ধে সাবধান হও। একটি ছোট ছিদ্র মস্তো বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে’। উল্লেখ্য, সঞ্চয়ের জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক মানুষের একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় প্রত্যয়। দৃঢ় প্রত্যয় থেকেই গড়ে ওঠে সঞ্চয়ের প্রবনতা।

লেখক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল, drmazed96@gmail.com


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন