বানী ডেস্ক :
দুদলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবারও ঢাকার প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীসহ সন্দেহভাজন ২ শতাধিক লোককে আটক করা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজারে যানবাহন থেকে নামিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদের সেখানকার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের দাবি, নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে এসব চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে শুধু তাদেরই আটক করা হয়েছে। তবে এদিন ঢাকার বাইরে থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের যানবাহনে কোনো তল্লাশি ছাড়াই ছেড়ে দিতে দেখা যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাভার ও আমিনবাজার : আশুলিয়া, বিরুলিয়া ও আমিনবাজারসহ সাভারেই তিনটি চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। সকাল থেকেই আমিনবাজার চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। যাত্রীদের ব্যাগ, মালামালসহ মোবাইল ফোনও তল্লাশি করা হয়। পথচারীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্র জানায়, বিভিন্ন বাস থেকে অনেক যাত্রীকে আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ঢোকানো হয়। হাসপাতালটি ‘অস্থায়ী হাজতখানা’ হিসাবে ব্যবহার করেছে পুলিশ। সেখানে একটি কক্ষে তাদের আটকে রাখা হয়। পরে তাদের সাভার থানায় নেওয়া হয়েছে। এ সময় বিএনপির ৮০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে একই সড়কে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী গাড়ি ভর্তি করে গেলেও তাদের গাড়ি তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, আমরা হাসপাতালের একটি কম্পাউন্ড ব্যবহার করেছি, হাসপাতাল নয়।
কেরানীগঞ্জ : কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রবেশের ৩ পয়েন্ট পোস্তগোলা সেতু, বাবুবাজার সেতু ও বসিলা সেতুতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব চেকপোস্ট থেকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পোস্তগোলা সেতুর হাসনাবাদ থেকে ২৮ জন, বাবুবাজার সেতুর কদমতলী থেকে ২৫ জন ও বসিলা সেতুর ঘাটারচর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। বেলা ১১টায় বাবুবাজার সেতুর কদমতলী গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছে পুলিশ। পুলিশের চেকপোস্টের পাশেই সামিয়ানা টানিয়ে মঞ্চ বানিয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর সবগুলো ঘাটে খেয়া চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘাটের টোলঘরের সামনে বাঁশ, বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।
সদরঘাট : সকাল থেকেই রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় ৮০ জনকে আটক করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি শাহিনুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নাশকতার পরিকল্পনার সন্দেহে তাদের আটক করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, লঞ্চ থেকে নেমেই পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ সবকিছু তল্লাশি করে পুলিশ। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও কললিস্ট চেক করা হয়। বরগুনা থেকে আসা যাত্রী রফিক হাওলাদার বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছি।
উত্তরা : আব্দুল্লাহপুর চেকপোস্ট, পলওয়েল মার্কেট, বিএনএস সেন্টারে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের আজমপুর, ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের ধউর চেকপোস্ট ও উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ, র্যাব-ডিবি। এ ছাড়াও উত্তরা পূর্ব থানার বিভিন্ন এলাকায়ও র্যাব-পুলিশকে চেকপোস্ট বসাতে দেখা গেছে।
টঙ্গী : সকাল থেকে টঙ্গী স্টেশন রোডে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল তল্লাশি করেছে পুলিশ। এছাড়াও সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তে পুলিশ তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে যোগাযোগ করেছে। টঙ্গীর তুরাগ নদের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় নৌ-পুলিশ। তল্লাশি ও নৌযান বন্ধের কারণে অনেকে ভোগান্তির শিকার হন।
ডেমরা : সুলতানা কামাল সেতুর পশ্চিমপারের চেকপোস্টে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও র্যাব। তবে দুপুরের দিকে যাত্রীবাহী কোনো বাস দেখা যায়নি।
রূপগঞ্জ : শুক্রবার সকাল থেকে রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের তারাবো বিশ্বরোড এলাকার সুলতানা কামাল সেতু ও ৩০০ ফুট সড়কে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালায়। দুদিনে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সন্দেহভাজন ১৫ জনকে আটক করেছে।