রহমত উল্লাহ :
টেকনাফ যুবলীগের নেতা ওসমান সিকদার নিহতের সময় আজ ১ মাস পূর্ণ হতে চললেও দলীয় কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নে আলোচিত ইয়াবা কারবারির গুলিতে নিহত পরিবারের খবর কেউ রাখেনি, এমন অভিযোগ করেছে তার পরিবারের লোকজন। এমনকি তার লাশ দাফনের সময় দলীয় নেতাকর্মী বা জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত থেকে তাদের সান্ত্বনা দেয়নি। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার জীবন চলে যায়। একটি জীবনের কোন মূল্য ও সম্মান না দেয়ার বিষয়টি খুবই দূঃখজনক বলে জানিয়েছেন নয়াপাড়াবাসি।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) অসহায় পরিবারটিকে দেখতে গিয়ে নিহতের স্ত্রী সাহিদা আক্তার বলেন, আজ ১ মাস ধরে একা একাই ১১ মাসের সন্তান নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতেছি। কেউ দেখতে আসেনি আমাকে আমার সন্তানকে! সান্তনা দিবে দুরের কথা দেখা করতে ও আসেনি স্বামী হারানোর কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে চলতেছি। দুঃখের সময় আমার পাশে আজ কেউ নেই । আমার গহনা বিক্রি করে দলের নেতাকর্মীর জন্য নির্বাচন করেছিল স্বামী। আজ সেই নেতারা আমার খবর নিচ্ছে না।
একা থাকার কষ্টে ‘রাতের অন্ধকার, ঠাণ্ডা ঘর, একা আমি… চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করি কিন্তু ঘুম নেই চোখে! চারপাশে কেউ নেই। কেন আমার স্বামী রাজনীতি করেছিল? কি পাবার আশায় দল পরিচয় দিয়েছিল এটা মনকে বুঝাতে পারতেছিনা ? কে কার তার দলের নেতা কেউ নেই… ভাবনাগুলো স্বাধীনভাবে মেলার সুযোগ পেয়েছে।
নিহত ওসমানের বোন আয়েশা বেগম (২২) বলেন, আমাদেরকে সব সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন কিছু দলীয় নেতাকর্মী। কিন্তু সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। ওসমানের সন্তান এখন অসুস্থ। আমারা গরীব। অর্থাভাবে মামলার খোঁজ-খবরও রাখতে পারছি না। দলের পক্ষ থেকেও আর তেমন কেউ খোঁজ নেন না। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের যেন শাস্তি হয় এটাই এখন চাওয়া। ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছি ইতিমধ্যে ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে প্রকৃত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ;তাদেরকে আটক করে জেলে পাঠাতে হবে। তাদের যেন আজীবন জেল না হলে তারা বাহির হয়ে আমাদেরকে মেরে ফেলবে। আমাদের জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ওসমানের উপার্জিত টাকায় কোনমতে খেয়ে না খেয়ে চলে যেত তাদের সংসার। কিন্তু ওসমানের মৃত্যুতে আধাঁর নেমে আসে পরিবারটির উপর।
নিহত ওসমানের মেয়ে জাফরিনার কান্না থামাতে পারছিনা।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, নিহত যুবলীগ নেতার ঘটনায় ৯জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে তার বোন। সেই দিন দাফনের আগে ২নং আসামিকে আটক করে পুলিশ ৭ নং আসামিকে গত শুক্রবার আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরকে আটক করার জন্য অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য,টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. উসমান শিকদার দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
গত (১ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৫টারদিকে ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ওসমান টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া গ্ৰামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং সাবরাং ইউনিয়নের যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।