সাইকুল হাসান :
ময়মনসিংহে গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) কর্মকর্তা আকরাম হোসেন,জুয়েল মিয়া ও তাদের টিম সদস্যদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে ধরেন সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক। তিনি দৈনিক আমাদের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি ও দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল আলম রফিক বলেন, আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকায় ডিবির অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর জেরে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে নিউ মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিকের সামনে থেকে আমাকে আটক করা হয়। ডিবির এসআই আকরাম হোসেনসহ সাদা পোশাকধারী অজ্ঞাত ৭-৮ জন আমাকে চোখ বেঁধে একটি হায়েজ গাড়িতে তুলে নেন। গাড়িটি পুরাতন গোদারাঘাটের ওপারে চরাঞ্চলে যায়। তখন ডিবির এসআই আকরাম হোসেনের মোবাইল ফোনে অপর প্রান্ত থেকে একজন বলছেন, ‘রফিককে আটকের খবর সাংবাদিকরা জেনে গেছে। তাকে এ মুহূর্তে ক্রসফায়ারে দেয়া যাবে না। তাড়াতাড়ি তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে আসো।’ ফোন লাউড স্পিকারে ছিল।
খায়রুল আলম রফিক বলেন, আমি কোনো অপরাধী না হয়েও ডিবি’র হাতে আটকের পর তিনদিন অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করেছি। ক্রসফায়ারে ব্যর্থ হয়ে আইসিটি আইনে মামলা দিয়ে আমাকে আদালতে পাঠায়। শুরু হলো আমার কারা জীবনের নতুন অধ্যায়। দুই মাস কারাভোগে আমার জীবনে আঁধার নেমে আসে। নির্যাতনের কারণে আমি আজও চোখে ঝাপসা দেখি, শরীরে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ শকের কারণে রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন মারাত্মক শরীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর আমার চোখ বাঁধা নির্যাতনের ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে এসআই আকরাম এবং এএসআই জুয়েলসহ অন্যরা। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হই এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। গত ১৮ জানুয়ারি এসআই আকরাম এবং এএসআই জুয়েলসহ ৭-৮ জন ডিবি কর্মকর্তাকে আসামি করে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করি। পরেে মাননীয় পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ কে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। একটি কপি কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে পেরন করা হয়।
আদালতের আদেশ কপি পেয়ে ২৫ জানুয়ারী মামলা রেকর্ড করেন। মামলা নং- ৮২ তারিখ ২৫/০১/২০২১।
এসআই আকরামকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে সারা দেশের সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। তাকে গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে খায়রুল আলম রফিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। তাকে নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়। চোখ বেদেছেন কেন জানতে চাই তিনি বলেন, এটা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলতে পারবেন। ঘটনার দুই বছর পর তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্তে যদি আমি দোষী হই তবে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মেনে নেব। আর যদি দোষী প্রমাণিত না হই তবে রফিক আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন। তবে সকল কিছুর জন্য দায়ী কয়েকজন সাংবাদিক। তাদের কারনে আজ আমার বিপদ।