নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডাক্তার ইসহাক খান সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন৷
১৯৩৭ সালে চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলসাদেক গ্রামে বনেদী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। এলাকায় প্রকাশ ‘সাহেবের পরিবার’ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার (অবঃ) ছৈয়দ আহমেদ সাহেবের পরিবারের সন্তান হিসেবে চেনে।
২০০৯ সালে ৯ জিলহজ্জ ইওমুল আরাফাত (আল্লাহ পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তদের দিন) দিনে শুক্রবার সকাল ৯টায় জুমার নামাজে প্রস্তুতি জন্য গোসল সারেন। এরপর বিছানায় শুয়ে পড়েন। সবার সামনে উচ্চস্বরে কালেমা শাহাদাৎ পড়তে পড়তে মৃত্যু বরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহ ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন)।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী ছাগিরা।
এলাকায় ‘ডাক্তার ইসহাক খান’ হিসাবে পরিচিত। তিনি সমাজসেবক,শিক্ষাবিদ, মজলুম জননেতা ও ভাষাবিদ ছিলেন। একাধারে ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, ফার্সি, বার্মিজ, আরবীতে সমান পারদর্শি ছিলেন।
পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৫৪ সালে। (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানসহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সাথে একই পড়ালেখা করেন।) কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে আই এ, পাকিস্তানের করাচি কলেজ থেকে ইংরেজী উপর উচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে (২ বছরের কোর্স) চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নেন।
বিয়ে করেছিলেন পেকুয়া উপজেলা মেহেরনামা গ্রামের বনেদী ও সিকদার পরিবারের জমিদার মরহুম আলহাজ্ব আবুল খাইয়ে সিকদারের প্রথম কন্যা শামসুন্নাহারকে। (কামাল উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন সরকারী উচ্চপদস্থ (অবঃ) কর্মকর্তা ও হাফেজ বাহাদুরের বড় বোন)।
ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই সৎ ছিলেন। ধনসম্পত্তির ওপরে কোন মোহ ছিলনা। বিশেষ করে শিরক ও পরের হককে খুবই ভয় করতেন। মৃত্যুর সময় সম্পদ হিসাবে রেখে যান সরকারী পেনশন ভাতা ( উত্তরাধিকার সুত্রে আমার মা উক্ত পেনশনভোগী) ও চকরিয়া কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলসাদেক গ্রামের পৈত্রিক বসতবাড়ি ( আমার আব্বার দাদা বশরত আলী ২শ বছর আগে) এছাড়া উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া জমিজামা ক্রমান্বয়ে বিক্রি করে আমাদের ৫ ভাই ও ৮ বোনের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করতেন অন্যায় ভাবে পরের এক টাকা হক নষ্ট করে যেন দুনিয়া ও আখিরাত নষ্ট না করি। এবং হারাম জিন্দেগীতে বড় লোক হওয়ার থিওরি না খুঁজি। দীর্ঘ ১১ বছর বাবার অনুপস্থিতিতে মনে হচ্ছে বাবার শাসন-সোহাগে এখনো এগোচ্ছি সামনে।
কর্মজীবনঃ
আমাদের নানীর ভাই তৎকালীন টেকনাফ থানা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুরোধে টেকনাফে নয়াবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে টানা ২৫ বছর শিক্ষকতা শেষে অবসর নেন।
এর আগে অধুনালুপ্ত নয়াবাজার মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন অত্র বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজপাড়া গাঁয়ে অসহায় গরীব দুঃখীদের চিকিৎসক হিসেবে স্থান করে নেন আমার পিতা ডাক্তার ইসহাক খান।
বিশেষ করে মাঝে গরীবের ডাক্তার হিসাবে ‘ডাক্তার ইসহাক খান’ নামে এখনো এলাকায় এক নামে পরিচয়। জীবদ্দশায় চিকিৎসক হিসেবে যেমন সফল ঠিক তেমনিই শিক্ষকতায় সফল। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার পর ঝড়ে পড়া গরীব মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠাতা করেন নয়াবাজার জুনিয়র হাইস্কুল (বর্তমানে উচ্চ বিদ্যালয়)। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও নানানভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন।
তাছাড়া সমাজসেবক থেকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মজলুম জননেতা হিসাবেও সমাদৃত। আন্তজার্তিক রেডক্রস (বর্তমানে রেডক্রিসেন্ট) টেকনাফ থানার হোয়াইকং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন। যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সতর্কসহ ত্রান-সাহায্য ও চিকিৎসা সেবায় সমান তালে এগিয়ে ছিলেন প্রায় দুইযুগ সময়। পরবর্তীতে সরকারি কর্মচারী হিসাবে বিধি নিষেধ থাকায় উক্ত স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেন।
নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নাফনদী ওপার থেকে বার্মার সামরিক জান্তার হাতে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন। ওই সময় সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকায় অনেকে রাতের আঁধারে আমার আব্বা থেকে চিকিৎসা নিতে আসতেন। নিপীড়িত মা-বোনদের সামরিক জান্তা লোমহর্ষক কাহিনী শুনে নিরবে নিভৃতে কেঁদেছেন প্রতিনিয়ত। বিনা পয়সায় তাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন। বাড়ীর রান্না করা খাবার ও পকেটে যাই থাকে দিয়ে দিতেন । তাদের কাছ থেকে বার্মার সামরিক জান্তা নির্যাতনের কাহিনী নিজ হাতে ইংরেজিতে লিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন, ওআাইসি এবং ক্ষমতাধর বিশ্ব মোড়লদের কাছে টেলিগ্রাফ, ফেক্স ও চিঠি মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতেন। বহু দেশ সফর করে সামরিক জান্তা সরকারকে চাপসৃষ্টি করে রোহিঙ্গা মুসলিম উপর চলা অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ করতে জোর দাবী জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ প্রথম ১৯৭৮ সালে শরণার্থী হয়ে পালিয়ে আসা নির্যাতিত, নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই নিপীড়িত জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। অপরদিকে দেশ মাতৃকার টানে বিপুল সংখ্যক শরনার্থীদের ভারে নুইয়ে পড়া বাংলাদেশ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বার্মায় প্রত্যাবাসনে জন্য বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানিয়ে হয়ে উঠেছিলেন মজলুম রোহিঙ্গাদের জননেতা।
শুধু তাই নয়, এইসব নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে স্বগোত্রীয় রক্তের সাথে বেঈমানী করে গড়ে উঠা সন্ত্রাসী সংগঠন আরইএফ ও আরএসও’র মতো অসংখ্য ভূঁইফোঁড়দের কর্মকান্ড বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহয়তা করেছেন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইসব ভূঁইফোঁড় সংগঠনের কাছে কোন সাহায্য না দিতে বারংবার নিষেধ করেছেন। তিনি মনে করতেন বার্মার সামরিক জান্তা সরকার
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানো একমাত্র কারণ হল এই সব ভূঁইফোঁড় সংগঠন