নিজস্ব প্রতিবেদক
তাঁর নাম এম. আলাউদ্দিন। কক্সবাজার জেলা পরিষদের বরখাস্তকৃত সাঁট লিপিকার।
বরখাস্তের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ ইং। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুর রহমান এম আলাউদ্দিনকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পত্র প্রেরণ করেছিলেন যা কক্সবাজার জেলা পরিষদের বিভাগীয় মামলা নাং ১/২০১২ ইং এর তদন্ত শেষে গৃহিত হয়। অত্র বিভাগীয় মামলা সূত্রে জানা যায়,তৎকালীন সাঁট লিপিকার এম. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি মারাত্মক অভিযোগ তদন্তাধীন ছিল। এর একটি হলো তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে অশালীন আচরণ এবং দ্বিতীয়টি হলো সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নারী প্রশিক্ষণার্থীকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কু- প্রস্তাব দেয়া। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলা রুজুর প্রায় ১ বছর পর অভিযোগ তদন্তপূর্বক ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার জন্য অনুমোদন চেয়ে সচিব বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। ২০১৪ সালের বরখাস্ত করা হলেও শাস্তিপ্রাপ্ত বরখাস্তকৃত এম. আলাউদ্দীন ২০২২ সাল থেকে কক্সবাজার জেলা পরিষদে কাজ করে চলেছেন। ছবিতে দেখা যায় তিনি অফিসারের মত একজনকে চেক প্রদান করছেন।
জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মচারী জানান, এম. আলাউদ্দীন এখন নিয়মিত অফিস করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,এম. আলাউদ্দিন জেলা পরিষদের তৃতীয় তলার ৯ নং রুমে বসে দাপ্তরিক কাজ করছেন। শুধু তাই নয়,প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খরচের টাকা নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তিনি লাক্ষ্যারচর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রিংভং দাখিল মাদ্রাসা, টেকনাফ এজাহার বালিকা বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে খরচের টাকা গ্রহণ করেছেন। ২০১৪ সনে বরখাস্ত হলেও
এম. আলাউদ্দিন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে পরিবার নিয়ে থাকেন। সেখানে নাকি এসিও চলে! এমনকি জেলা পরিষদের সুইপার ও স্টাফ দিয়ে তিনি বাসার বাজার করান।
এ ব্যাপারে এম. আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্যি নয়। তিনি এরকম চরিত্রের লোক নন।
তিনি জানান,তাঁর বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সাজিয়েছে জেলা পরিষদের কর্মচারীদের একটি চক্র। তারা সাংবাদিকদের টাকা পয়সা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এসব নিউজ করানোর চেষ্টা করেছেন।
বিভাগীয় মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন,তাঁর বিরুদ্ধে যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেটিও একটি ষড়যন্ত্র। তিনি এ বিভাগীয় আদেশের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর আপিল করেন। আপিলের সিদ্ধান্ত পেতে দেরী হওয়ায় প্রতিকার পাওয়ার জন্য তিনি মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন।
মহামান্য হাইকোর্ট তার অনুকূলে জয়েনিং ডাইরেকশন দেন। কিন্তু এ ডাইরেকশনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা পরিষদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন। চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আগের দেয়া আদেশ স্থগিত করে। তিনি সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন। তার কথা মতে আপিল শুনানী হয় আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে। ফুল বেঞ্চ নিম্ন আদালত অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগকে মামলাটি দ্রুত শুনানি করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু শুনানি করার জন্য ২/৩ বছর অতিবাহিত হয় মামলাটি তালিকায় আনতে। শেষ পর্যন্ত তালিকায় আসলে মামলাটি শুনানি হয়। ২০ নং কোর্টে ( বিচারপতি নাঈমা হায়দারের কোর্ট) চূড়ান্ত শুনানি হয়। শুনানির আদেশ তিনি কক্সবাজার জেলা পরিষদে জমা দেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মিটিং এ রেজুলেশন হয়। সেটার কপি তিনি মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। তিনি বলেন বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান স্যারের আন্ডারে আছেন।
প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ অসত্য ও বানোয়াট। সরেজমিন তদন্ত করলে তা অসত্য প্রমাণিত হবে।
তাঁর যোগদানের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,এম. আলাউদ্দিন জেলা পরিষদের কর্মচারী নয়, বরখাস্তকৃত। তাঁকে আবার নিয়োগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে মাহাবুব উল করিম জানান, তাঁকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাঁর নিয়োগ সংক্রান্তে কোর্টের কোন আদেশ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জাতীয় কোন আদেশ তিনি পাননি। জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে এম. আলাউদ্দিন অফিস করছে কিভাবে।
জবাবে মাহাবুব উল করিম জানান, সে অফিস করে না। সম্ভবত চেয়ারম্যান সাহেবের ব্যক্তিগত পিএ হিসেবে কাজ করে। অফিসিয়ালি সে কোন বেতন ভাতা পায় না।
অভিযুক্ত এম আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ এ প্রতিবেদকের হাতে আছে।