• শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
বাসযাত্রীরাও পাচ্ছেন রেটিং, রিভিউ ও অনলাইনে অভিযোগ জানানোর সুযোগগণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে : প্রধান উপদেষ্টাসাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করার আশ্বাস তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজেরসার্চ মানবাধিকার সোসাইটি কক্সবাজার জেলা শাখার ইফতার মাহফিল ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্নযুগ্ম সচিব হলেন কক্সবাজারের ডিসি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনঢাকা থেকেই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু করবে অস্ট্রেলিয়াহাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণএপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন বেগম খালেদা জিয়ারাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৬ হাজার ২০২টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশকারাহাসপাতাল এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অবকাশ কেন্দ্র, ক্যান্টিনে গলাকাটা বানিজ্য

জেল সুপারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজার কারাগারে বাড়ছে বন্দী সেবা।

মোহাম্মদ ফয়সাল:
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


দেশের কারাগারগুলোর কথা যখন ওঠে তখন শুধু অভিযোগ আর অভিযোগই শোনা যায়। কয়েদিদের সাথে করা হয় অমানবিক আচরণ। শুধুই দুর্নীতি আর দুর্নীতির খবর। কারাগারগুলোর সেই চিরাচরিত দৃশ্যের মাঝে যেন কক্সবাজার জেলা কারাগার খুবই ব্যতিক্রম। এখানে নেই তেমন কোনো অভিযোগ। যেন বদলে গেছে সবকিছু। বেড়েছে সেবার মান। সম্প্রতি এই কারাগারে সামগ্রিক উন্নয়নচিত্র ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খুশি কারাবন্দীরাও।

এমনটাই জানিয়েছেন সদ্য জামিনে মুক্ত বেশ কয়েকজন বন্দী। তাদের ভাষ্যে, কক্সবাজার কারাগার আর আগের সেই কারাগার নেই। বেড়েছে মান, বেড়েছে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও আছে কারাবন্দীদের জন্য সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে দেখা মেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল এলাকার সব্বির আহমদের ছেলে আবদুর রহমানের সাথে। তিনি যৌতুক দাবি সংক্রান্ত একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর কারাগারে হাজতি হিসেবে ছিলেন টানা ২০ দিন। গত সোমবার আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে বের হন তিনি।

বিশ দিনের কারাজীবন কেমন কেটেছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘খুব ভালো কেটেছে’। কারাগার জীবন কেমন আবার ভালো এমন প্রশ্ন করলে তিনি হাসেন। বলেন, ‘নিজের ঘরে যে পরিবেশ ছিল, তেমন ভালো, প্রচলিত অর্থে কারাগার সম্পর্কে যে তথ্য আমি জানতাম তার সাথে এই কারাগারের পরিস্থিতির মিল পাইনি।’

আবদুর রহমানকে একটু বিস্তারিত বলতে বলা হলে তিনি জানান, কারাগারে একটি শৃঙ্খলিত এবং রুটিনমাফিক জীবন কাটিয়েছেন তিনি। মানসম্পন্ন খাবার, সপ্তাহের এক দিন ৮-১০ মিনিট মোবাইল ফোনে প্রতি মিনিট এক টাকা করে পরিশোধ করে পরিবারের স্বজনদের সাথে আলাপ, ১৫ দিনে একবার স্বজনরা কারাগারে এসে সাক্ষাৎ করেছেন, স্বজনদের দেয়া পিসিতে জমা টাকা কার্ড প্রদর্শন করে কারা অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়। সবমিলিয়ে ভালো কেটেছে। একই সময় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বের হন টেকনাফের উত্তর শীলখালী এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে বাবুল (৩০)। তিনি মারামারি সংক্রান্ত মামলায় দেড় মাস বন্দী থাকার পর গত মঙ্গলবার বের হয়েছেন। তিনিও আবদুর রহমানের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কারাগারে বন্দী থাকার জন্য ওয়ার্ড বণ্টন, চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণের ক্ষেত্রে আগের পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। কারাগারের অভ্যন্তরে বড় এলইডি পর্দায় শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার-সহ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারণার ফলে বন্দীদের মানসিক অবস্থার ইতিবাচক হয়েছে। আগে কারা অভ্যন্তরের ক্যান্টিনে মূল্যতালিকা ছিল না, এখন সেই মূল্যতালিকা দেখেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, বছর কয়েক আগেও একটি মামলায় সপ্তাহের মতো কারাগারে ছিলেন তিনি। ওই সময়ের সাথে বর্তমান সময়কে মিলিয়ে কারাজীবনকে স্বস্তিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাদের কথার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া আরো কয়েকজনের সন্ধানে আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আইনজীবীদের সহায়তায় কথা হয়েছে কারামুক্ত আরো কয়েকজনের সাথে। তাদের একজন উখিয়ার কুতুপালংয়ের ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আছাদুজ্জামানের ছেলে সেলিম উল্লাহ। তিনি হত্যা মামলায় পাঁচ মাস কারাগারে ছিলেন। জামিন মিলেছে সোমবার। রোহিঙ্গা যুবক সেলিমের প্রথম কারাগারে থাকা। তিনিও কারাগার নিয়ে যা প্রশ্ন করা হলো বললেন ভালো।

একইভাবে কথা হয়েছে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবদুল করিম, টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার আবু বক্করের ছেলে নুরুল আমিন, কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার কবির আহমেদের ছেলে জয়নাল আবেদীন, চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে হুমায়ুন কবিরের সাথেও।

এসব মানুষের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে কারাগারে বন্দীদের মাঝে স্বস্তির এক গল্প উঠে এসেছে। এসব মানুষ বলেছে, কক্সবাজার জেলা কারাগারের ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছেন তারা। বন্দী সাক্ষাৎ, বন্দীদের খাবারের মান, স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলা, বন্দীদের জামিন, চিকিৎসা, বিনোদন সবমিলিয়েই এই ইতিবাচক পরিবর্তন।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, কারাভ্যন্তরে নগদ টাকা একেবারে বন্ধ রয়েছে। কোনো স্বজন পিসিতে টাকা দিলে রসিদ মূলে যে টাকা জমা হওয়ার পর বন্দীর হাতে পৌঁছে যায় তা পিসি কার্ড। যে কার্ডটি ব্যবহার করে কারা ক্যান্টিনে প্রদর্শিত মূল্যতালিকা দেখে মালামাল ক্রয় করতে হয়।

কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, বর্তমানে ধারণক্ষমতার চার গুণের কাছাকাছি বন্দী রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১২ দশমিক ৮৬ একর আয়তনের এ কারাগারে ধারণক্ষমতা ৯০০ জন হলেও বর্তমানে বন্দীর সংখ্য তিন হাজার ২৭০ জন। ২০০১ সালে উদ্বোধন হওয়া কক্সবাজার জেলা কারাগারে ৮৬৬ জন পুরুষ এবং ৩৪ জন নারী বন্দী থাকার কথা; কিন্তু বর্তমানে এ কারাগারে বন্দী রয়েছে নারী ১৫৫ জন, শিশু ৩২ জন আর পুরুষ বন্দীর সংখ্যা তিন হাজার ৮৩ জন। এর মধ্যে ছয় শতাধিক রয়েছে রোহিঙ্গা।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো: শাহ আলম খান জানিয়েছেন, ধারণক্ষমতার চার গুণ বেশি বন্দী এবং অপ্রতুল জনবল নিয়েও সবার সহযোগিতায় কারাগারের শৃঙ্খলা ফেরাতে সফল হয়েছি। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিআরসির সহযোগিতায় শিশুদের জন্য বিনোদনের কক্ষ, বিনোদন সামগ্রী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এসব শিশুর লেখা পড়া, দুইবেলা দুধসহ পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর বাইরে সুপেয় পানির জন্য একই সংস্থার অধীনে কারা অভ্যন্তরে প্রকল্পের কাজও চলছে।

নিয়মিতভাবে কারাগার পরিদর্শন, বন্দীদের সাথে আলাপ করে যেকোনো সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজেই নিয়মিত খাবারের মান-পরিমাণ তদারকি করে এবং প্রতিদিনের খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করে বন্দীদের সরবরাহের ব্যবস্থা করি। মোবাইল ফোনে আলাপ, সাক্ষাৎ স্বচ্ছতার সাথে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জামিনে খালাসে মুক্তি প্রদানের যেকোনো হয়রানি রোধে প্রতিদিন জামিনপ্রাপ্ত বন্দীদের নাম কারা ফটকের সামনে এলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ফলে জামিন নিয়ে একশ্রেণীর প্রতারক চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে। যারা সাক্ষাতের জন্য কারাগারে আসেন তাদের বিনোদনের জন্য গেটের পাশে দর্শনার্থী বিশ্রামাগারে বড় টেলিভিশন ও ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দীদের সব কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন