• শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
সার্চ মানবাধিকার সোসাইটি কক্সবাজার জেলা শাখার ইফতার মাহফিল ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্নযুগ্ম সচিব হলেন কক্সবাজারের ডিসি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনঢাকা থেকেই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু করবে অস্ট্রেলিয়াহাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণএপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন বেগম খালেদা জিয়ারাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৬ হাজার ২০২টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশকারাহাসপাতাল এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অবকাশ কেন্দ্র, ক্যান্টিনে গলাকাটা বানিজ্যচট্টগ্রামের ভাষায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গারা ঘরে ফেরার স্বপ্নে বিভোরপ্রানঢাল অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাপেকুয়ায় ব্যবসায়ীকে হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

বিএনপির আন্দোলন ৩ পথে

কক্সবাজারবানী ডটকম:
আপডেট : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

কক্সবাজারবানী ডটকম:

সরকারের মনোভাব, জন আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকা- এই তিন বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে আবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের জোরালো আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। গত মাসে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ‘পরিকল্পনামাফিক’ না হওয়ায় আগামী দিনের আন্দোলন নিয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে এগোচ্ছে দলটি। দলের সমন্বিত প্রস্তুতির পাশাপাশি নেতাদের ভূমিকার ওপর কঠোর নজরদারি আরোপ করা হয়েছে। সাধারণ সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি পাওয়া গেলেও অপেক্ষাকৃত কঠোর কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের আশাব্যঞ্জক সক্রিয়তা কেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তা নিয়েও কাজ চলছে।

জানা গেছে, দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বিদেশ থেকে ফেরার পর আন্দোলনের চূড়ান্ত ও ধারাবাহিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা আলাপকালে বলেছেন, আন্দোলনের জন্য মাঠ প্রস্তুত। সব কিছুই এখন বিএনপির ফেবারে রয়েছে। এ কারণে আন্দোলনে আর কোনো ধরনের ভুল তারা করতে চান না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। আগামী দিনে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায়, তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নেতারাও কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিএনপি শান্তিপূর্ণ পথেই এগোবে।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সরকার যত দ্রুত এই জনদাবি অনুধাবন করবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে।

নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। সে হিসেবে সময় দুই মাসের মতো বাকি রয়েছে। বিএনপি চলমান আন্দোলন সফলে সরকারের কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে এই সময়টাকে কিভাবে কাজে লাগাতে পারে-দলটির অভ্যন্তরে এখন সেই আলোচনাই চলছে।

বিএনপির পরিকল্পনা হচ্ছে, আন্দোলনে এক দফা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা। আর সরকার যদি এই দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, বিএনপি তা প্রতিহত করবে এবং সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব দলের অবস্থান এমনই। আর যেসব দল যুগপৎ-এ নেই, কিন্তু অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চায়- ২০১৪ সালের মতো তারাও ওই নির্বাচন বর্জন করবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেছেন, খুব কম সময়ের মধ্যেই আন্দোলন পরিণতি লাভ করবে। বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ফলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকে কোনো না কোনো বিকল্প পথ বেছে নিতেই হবে। বিএনপি এ-ও মনে করছে, নির্বাচন বা আন্দোলনের মাঠে এবার বিএনপিই সরকারের একমাত্র প্রতিপক্ষ নয়। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক- এটা যেমন দেশের সাধারণ মানুষ চায়, তেমনি গণতান্ত্রিক বিশ্বেরও চাওয়া এটি। এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে তারা। খুব শিগগিরই এই চাপ আরো জোরালো হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছে সেটাতে আস্থার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, এর ফলে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আরো জোরালো হয়েছে। এই ইস্যুতে ভিসানীতি ঘোষণাসহ মার্কিন তৎপরতা আশা জোগাচ্ছে তাদের।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ দু’টি জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকার অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে প্রতিহতের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। সেই সময় নির্বাচন নিয়ে মধ্যস্থতা করতে জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকা এসেছিলেন। তারানকোর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকও হয়। বিএনপির নেতারা দাবি করেন, ওই নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ে আরেকটি নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার সে কথা রাখেনি। এরপর দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। নির্বাচনের আগে তারা প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সংলাপে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশা থেকে সংলাপে গিয়েছিলেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত ফল অর্জন করে দলটি। মাত্র সাতটি আসনে তারা বিজয়ী হয়।

নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংলাপে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননি প্রধানমন্ত্রী।

এরকম একটি প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় নির্বাচনও খুব সন্নিকটে। এই নির্বাচন নিয়েও আগের অবস্থানেই আছে বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেছে তারা। কিন্তু বিএনপির এই দাবির প্রতি এখনো কর্ণপাত করেনি সরকার। উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সহসাই কোনো সমঝোতা হবে- এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে বিএনপি। সরকারের যে অনমনীয় মনোভাব সেটাও তারা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে।

মার্কিন ভিসানীতিসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের অব্যাহত চাপের মুখে সরকার তাদের অবস্থান বদলাবে, নাকি আগের মতোই বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে- সেটা পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। তবে আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির মূল্যায়ন, অতীতের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলনকে দমনের পথে হাঁটছে সরকার। সরকারের এই অবস্থানসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ সাজাচ্ছে বিএনপি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আবার আন্দোলনে গতি আনতে চান নীতিনির্ধারকরা। কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য দলে নানামুখী পর্যালোচনা চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা এখন সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তারা দেশে ফিরলে আন্দোলন সংক্রান্ত এই আলোচনা-পর্যালোচনা সিদ্ধান্তে রূপ নেবে। মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে আছেন। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়েও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এক দফার যুগপৎ আন্দোলন গতি লাভ করবে। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে গিয়ে আন্দোলন গতি লাভ করবে। ওই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। তখন কর্মসূচি হবে আবার ঢাকাকেন্দ্রিক। বিচারালয়ের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের সাথে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে। এর আগে দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে বিএনপি। আলোচনা সভা ছাড়াও পয়লা সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিশাল আয়োজনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি করবে দলটি। নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে র‌্যালিকে এক দফার কর্মসূচির মতো রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড। এর আগে সরকারবিরোধী বড় আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি।

সে সময় দলটির পরিকল্পনা ছিল, ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছানো। কারণ, মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে মহাসমাবেশের পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দলের চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়িত না হওয়ায় কর্মসূচিকেন্দ্রিক নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করে হাইকমান্ড। দলটি লাগাতার কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বিরতি দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসে এখন পর্যন্ত নরম কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। একইসাথে ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে গাফিলতি দেখানো নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেককে মৌখিকভাবেও শাসিয়েছে দলের হাইকমান্ড।


আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন