অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে অন্তত দুই লাখ মানুষ। পানিবন্ধী মানুষজন সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন। সরকারী ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিতরণ করা ত্রাণ খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কসমূহ পানিতে ডুবে গেছে। পেকুয়া-লালব্রিজ-চকরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পেকুয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পেকুয়া উপজেলার অন্তত ত্রিশ হাজার ঘরবাড়ি, হাটবাজার ও দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, খামার। এছাড়া বন্যার কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত মানুষজন গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে উঁচু এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। প্লাবিত এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বানের পানিতে নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় সুপেয়ে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া-পেকুয়া অংশের অন্তত ১০ টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী চকরিয়া-পেকুয়ার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, বারবাকিয়া, শিলখালী, টইটং ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বর্তমানেও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরো কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, বন্যার্তদের জন্য সরকারী সহায়তা পৌঁছে দিতে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টের লোকজন কাজ করছে। নৌবাহিনীর পক্ষ থেকেও পেকুয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে ভয়াবহ এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার প্রায় সকল চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপজেলার অন্তত দশ হাজার বাড়িঘর, মসজিদ মাদ্রাসা ও স্কুল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় এক হাজার কাঁচা ও আধাকাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গিয়ে ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।