বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পেকুয়া, চকরিয়া ও রামু বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এর তথ্য অনুযায়ী জেলার দুই লক্ষ মানুষ পানিবন্দি। চারিদিকে কেবল পানি আর পানি। এ বন্যার কারণে এতদ অঞ্চলের অসহায়, গরিব মানুষদের জীবনে এখন সীমাহীন দুর্ভোগ। বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি, তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। মাঠের ফসল, ধান ক্ষেত আর তরিতরকারি সবই পানিতে ডুবে ধ্বংস হয়েছে। গোলার ধান, গোয়ালের গরু আর ছাগল সবই ক্ষতিগ্রস্ত।
বন্যার পানিতে শত শত মাটির ঘর ধসে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শত শত একর জমির ফসল। মাছের খামার সমুহ ডুবে যাবার কারণে ভেসে গেছে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। রাস্তাঘাট, বসত বাড়ি, স্কুলের মাঠ সবই পানি। বাড়ির বাইরেও পানি, ভেতরেও পানি। দাঁড়ানোর জন্য কোথাও একটু শুকনো জায়গা নেই। বসার এবং ঘুমানোর জন্যও কোথাও একটু জায়গা নেই। সব মিলিয়ে এতদ অঞ্চলের মানুষের জীবনে আজ বড়ই কষ্ট। মহিলা, বৃদ্ধা এবং শিশুদের জীবনে এই কষ্ট আরো বেশি এবং তারা আরো বেশি অসহায়। সবদিকেই কেবল মানবতার হাহাকার। পানির কারণে এ অঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও বন্ধ। খাবার পানির বড়ই অভাব। সব নলকূপই পানির নিচে এবং পুকুরসমূহ ময়লা পানিতে ভরাট। রান্না করে খাবার তৈরির সুযোগ কোথাও নেই। শুকনো রুটি, বিস্কুট, মুড়ি আর চিড়া খেয়েই জীবন চালাতে হচ্ছে। এক কথায় ত্রাণের সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে জীবন।
বন্যার কারণে যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। এসব ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। কিন্তু এখন প্রয়োজন বন্যাদুর্গত মানুষদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। তারা যেন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। বন্যার সময় সার্বিকভাবেই মানুষের জীবনে কষ্ট নেমে আসে।এ অবস্থায় বন্যার্ত মানুষদেরকে সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আসুন দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছে দিই শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ।
বন্যার কারণে যে মানুষটি আজ সর্বহারা তার প্রতি আসুন আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। বন্যার কারণে যে মানুষটির ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে আসুন মাথা গোজার ঠাঁই করে দিই। যে কৃষকের ফসল ধ্বংস হয়েছে আসুন নতুন করে কৃষিকাজের জন্য সেই কৃষকের পাশে দাঁড়াই। যে ছাত্রটির বই খাতা নষ্ট হয়েছে সেই ছাত্রটির হাতে আসুন আমরা আবারো বই খাতা কলম তুলে দিই। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যেন সহজে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালু করতে পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে বর্তমানে বিদ্যমান ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দিতে হবে।
আসুন সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সব ভেদাভেদ ভুলে বন্যার্তদের রক্ষায় এগিয়ে আসি। এখন প্রয়োজন বন্যার্তদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। কক্সবাজারের সার্মথ্যবান মানুষজন তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়াই।বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থল খুলতে হবে এবং খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারি। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুবসমাজসহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বানভাসি মানুষ মুক্ত হোক এই প্রত্যাশা করি।
লেখক
আব্দুল্লাহ আল সিফাত
সভাপতি, ইয়ুথ ফাউন্ডেশন অব কক্সবাজার
ইমেইল: abdullahalsifat875@gmail.com