হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘সময় শেষ হয়ে এসেছে। আলেমদের আর জেলে রাখতে পারবেন না। আজকে বন্দি আলেমের মুক্তির দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমি সরকারকে বলব, যদি নিজেদের ভালো চান, অবিলম্বে কারাবন্দি সব আলেমকে মুক্তি দিন। হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে অবস্থা করুণ হবে। তোমাদের জন্য বঙ্গোপসাগর আছে। গদিসহ সাগরে নিক্ষেপ করা হবে। যদি গদি টেকাতে চাও। অতি দ্রুত আলেমদের মুক্তি দাও। জাতির কাছে ক্ষমা চাও। নিজেদের মুক্তির পথ বের করো।’
শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানের কাজি বশির উদ্দিন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি সব ওলামায়ে কেরামের মুক্তি, দেশব্যাপী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আলেমদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় করণীয় নির্ধারণে’ এ সম্মেলনের আয়োজন করে শায়খুল হাদীস পরিষদ। সম্মেলন থেকে দাবি আদায়ে ২০ আগস্ট দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার আলেম-ওলামা মিলনায়তনের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নিয়ে এতে অংশ নেন
হেফাজত আমির আরও বলেন, ‘এই দেশ স্বাধীন হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ কায়েমের জন্য। অথচ দেশে ন্যায় ও ইনসাফ কল্পনাও করা যায় না। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটাধিকার ছাড়া আগামী নির্বাচন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা দেশকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না। সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করুন।’
তিনি বলেন, ‘আলেমরা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও মুক্তি পাচ্ছেন না। নতুন মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। জুমার খুতবা ও ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করার বারবার চেষ্টা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আজকে ওলামায়ে কেরামদের ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। বের হলেই গ্রেফতার করা হয়। গোটা দেশ আজ কারারুদ্ধ। শুধু মামুনুল হক নন, গোটা দেশকে কারারুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করতে হবে। আমাদের যেটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে নামতে হবে। আপনারা যদি বাঁচতে চান অতি দ্রুত কারাবন্দিদের মুক্তি দেন। সরকারকে সতর্ক করব, এখনো সময় আছে। মুক্তি দেন। অন্যথায় আপনাদের মুক্তি মিলবে না। যারা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। তাদের বিরুদ্ধে আলেমরা গর্জে উঠবে।’
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আজকে ঐক্য হয়ে গেছে। সব আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কারাবন্দি ওলামাদের মুক্তি চান। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আলেমদের মুক্ত করা যাবে না। আজকে আলেমদের হাজিরা দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থা। আমরা চাই মামলা প্রত্যাহার করা হোক। তাদের হাজিরা থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মামুনুল হককে মুক্ত করতে চাই। মুক্ত করে ছাড়ব।’
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘১৯ মাস জেল খেটেছি। কি দোষ করেছিলাম। কি অন্যায় করেছিলাম। আমরা কি এ দেশে ঘরজামাই। আমরা বন্যায় ভেসে আসিনি। আমরা যেখানে যাই ফুলের মালা দেওয়া হয়। তোমরা যেখানে যাও সেখানে জুতার মালা দেওয়া হয়। জনগণ তোমাদের বয়কট করেছে। শাপলা চত্বরের মতো আরেকবার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।’
শায়খুল হাদীস পরিষদের সভাপতি তাফাজ্জুল হক আজিজ বলেন, ‘ঐক্যের বিকল্প নেই। আমাদের একদফা হলো আলেম-ওলামাদের মুক্তি। সরকারকে বলব, আপনারা যদি সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে চান। তাহলে মামুনুল হকসহ সব আলেমদের মুক্তি দেন। না হলে আন্দোলনের গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হবে। তখন আর সামাল দিতে পারবেন না।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আলেমদের মুক্তির দাবিতে এমন আন্দোলন করতে হবে, যেন তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। নয়তো দেশ অচল করে দিতে হবে। সারা দেশের লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে লংমার্চ করতে হবে।’
খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটির আমির মাওলানা আব্দুল হামীদ পীর সাহেব মধুপুর আলেমদের মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘দাবি পূরণ করলে শেখ হাসিনারই (প্রধানমন্ত্রী) লাভ। আপনাদের নিজেদের-ই পায়ের তলায় মাটি নেই। আলেমদের মুক্তি দিয়ে নিজেদের চিন্তা করুন, নয় তো পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষা করুন।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী বলেন, ‘এই সরকার খুনি সরকার। এই সরকারকে আর বেশিদিন রাখা যাবে না।’
সদ্য কারামুক্ত হেফাজতে ইসলামের সাবেক সহসভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ঐক্যের ভিত মজবুত করতে পারলে খাঁচা ভেঙে আমাদের নেতাদের মুক্ত করতে পারব। বাংলাদেশে নিয়ে বিদেশিরা ছেলেখেলা করছে। আমি চাই সরকারের পরিবর্তন হোক।’
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুমিন ও মাওলানা এহসানুল হকের যৌথ পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, বেফাক সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল হক, জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ আলী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মুসলিম লীগের কাজী আবুল খায়ের, শায়খুল হাদীস পরিষদের মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ, পটিয়া মাদ্রার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী, জামিয়াতুন নূর, উত্তরার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের নায়েবে মুহতামিম মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলীল, তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, বরিশালের জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়ার মুহতামিম মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, ফরিদপুর জামিয়া কুরআনিয়া চরকমলপুর মাদ্রাসার