কক্সবাজারের আলোচিত সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া রায়ে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও পুলিশের তিন সোর্সসহ ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন এপিবিএনের তিন সদস্যসহ সাতজন।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সোমবার বেলা সোয়া চারটার দিকে এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, রুবেল শর্মা, মোহাম্মদ আইয়াজ আয়াছ, সাগর দেব, নুরুল আমিন এবং নিজাম উদ্দিন তাদের সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন।
খালাস পাওয়া সাতজন হলেন এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, কনস্টেবল রাজিব হোসেন, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল ছাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। আদালতপাড়ার চারপাশে, পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নেয় নিরাপত্তাকর্মীরা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বিভাগের লোকজন কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বেলা ২টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে ১৫ আসামিকে কারাগার থেকে কক্সবাজারের জেলা আদালতে আনা হয়। পরে লাইন ধরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় এজলাস কক্ষে, দাঁড় করানো হয় কাঠগড়ায়।
আসামিদের উপস্থিতিতেই বেলা আড়াইটার কিছু আগে এজলাসে বসেন বিচারক। আসামিদের নাম ডাকার পর শুরু করেন ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ। প্রায় এক ঘণ্টা সারসংক্ষেপ পড়ার পর ঘোষণা করেন রায়।
এর আগে সকালে মামলাটির রায় ঘোষণার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে দুপুরে নেওয়া হয়। রায়ের দিন থাকায় সকাল থেকেই বাড়ানো হয় আদালতের নিরাপত্তা। সকাল ৯টার আগেই আসামিদের কারও কারও আত্মীয়দের দেখা যায় আদালত প্রাঙ্গণে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।
হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় টেকনাফের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।