গত ১২ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। এ দিন শুনানি শেষে আগামী ৩১ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল। এরপর থেকেই রায়ের জন্য প্রহর গুণছে মানুষ। এ মামলার রায় নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বিশেষ করে মামলার ২ নম্বর আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশের অপশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফবাসীর প্রতীক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না।
বরখাস্ত ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় অবস্থানকালে তার রোষানলে নির্যাতিত শত শত পরিবারের একটাই প্রত্যাশা প্রদীপ ও তার সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয়। শুধু তাই নয়, রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই বিশেষ প্রার্থনা ও রোজা রেখে ওই দোয়াই করছে টেকনাফের অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার।
এ মামলার বাদী নিহত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার কামনা মামলার প্রধান আসামি প্রদীপ এবং লিয়াকতের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। বাকি আসামিদের সাজা যার যার অপরাধ বিবেচনায় হোক। এর মাধ্যমে বিচারহীন হত্যাকাণ্ড কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিনহার বড় বোন বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে কেউ আইন ও সাজার হাত থেকে রেহাই পায় না—এ রায়ের মাধ্যমে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সূত্র মতে, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ ওসি থাকাকালে মাদক নির্মূলের নামে ২২ মাসে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার জন্ম দেন। তাতে মারা গেছেন ২০৪ জন। নিহত সবাইকে দেওয়া হয়েছে ‘মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের তকমা’।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ক্রসফায়ারে নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশ ছিলেন গরিব-নিরীহ। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ‘সন্ত্রাসী তাকমা’ দিয়ে একই পরিবারের তিন ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ আছে প্রদীপের বিরুদ্ধে।
ওই পরিবারের এক সদস্য জানান, খুনের শিকার হওয়া তিন ভাইয়ের স্ত্রী এবং বাবা হারা এতিম সন্তানেরা সবসময় বাবার হত্যায় জড়িত প্র্রদীপ ও তার সহযোগীদের ফাঁসি কামনা করেন। এটি নিশ্চিত হতে তারা প্রতি সোম ও শুক্রবার রোজা রেখে তাহাজ্জুদ নামাজসহ বিশেষ প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন। তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে তার তিন ভাইকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে জড়িতের বেশ কয়েকজন সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বরখাস্ত ওসি প্র্রদীপ টেকনাফ থানায় থাকাকালীন নিজের দুই মেয়েকে ‘ধর্ষণ’ করেছেন দাবি করে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, মেজর সিনহা হত্যার রায়ের দিন নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে তিনি প্রদীপের ফাঁসি কামনা করছেন। এজন্য তিনি রোজা রাখছেন ও সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন।
ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা করলেও এখনো পর্যন্ত মামলার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাননি বলে উল্লেখ করেন এ নারী।
টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম জানান, ‘মাদকের তকমা’ দিয়ে তার এলাকায় প্রদীপ ১৬ জনকে হত্যা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রায় সবাই নিরীহ ও নিতান্তই গরিব। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন প্রদীপের ফাঁসির কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করছেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
প্রদীপের অপকর্মের সংবাদ প্রচার করায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হন কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। তিনি বলেন, মাফিয়া ইয়াবা কারবারির হয়ে কয়েকশ পরিবারকে নির্যাতন করেছেন প্রদীপ ও তার সহযোগীরা। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করায় আমাকে ঢাকা থেকে ধরে এনে অস্ত্র, বিদেশি মদ ও ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। এর আগে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। চোখে মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয়।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, ‘আমরা চাই প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হোক। সিনহা হত্যায় তার ফাঁসির রায় হলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।